ধৃত আসামি নিজেকে ডাক্তার হিসেবে পরিচয় দিতেন।
‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ার’ আশ্রমের মৃত ব্যক্তিদের জাল মৃত্যু সনদ দেওয়ার অভিযোগে করা মামলায় প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান মিল্টন সমাদ্দারের তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার (২ মে) মিল্টনকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য তাকে সাত দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন ডিবি পুলিশের এসআই কামাল হোসেন। শুনানি শেষে ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেন তার তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
পুলিশের রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, ধৃত আসামি দীর্ঘদিন ধরে জাল জালিয়াতির মাধ্যমে ৫০টি মৃত সার্টিফিকেট দিয়েছেন। তিনি চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ার সেন্টার নামে চিকিৎসা সেবা প্রতিষ্ঠান খুলে মানবতার ফেরিওয়ালা পরিচয় দিয়ে অজ্ঞাতনামা, ওয়ারিশবিহীন ব্যক্তি, শিশু এবং প্রতিবন্ধীদের নিয়ে চিকিৎসা ও সেবা না দিয়ে তাদের মৃত্যুর কোলে ঠেলে দিয়েছেন। মৃত সংক্রান্ত সঠিক তথ্য উদঘাটনের জন্য ও এতে ধৃত আসামির অন্য কোনো উদ্দেশ্য আছে কি না তা তদন্তে পুলিশ রিমান্ড আবেদন করে।
ধৃত আসামি নিজেকে ডাক্তার হিসেবে পরিচয় দিতেন। আদৌ তার ডাক্তারি সনদ আছে কি না তা যাচাইয়ের লক্ষ্যে, সহযোগী অন্য আসামিদের শনাক্তসহ নাম, ঠিকানা সংগ্রহ এবং গ্রেফতার, চিকিৎসা সেবার নাম করে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে কোনো ভিকটিমকে হত্যা, অজ্ঞাতনামা শিশুদের আইনানুগ অভিভাবকদের অজ্ঞাতে পাচার করেছে কি না, তাদের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ বিক্রি করেছে কি না সেই তথ্য সংগ্রহের জন্য পুলিশ রিমান্ড আবেদন করে।
বুধবার (১ মে) রাতে রাজধানীর মিরপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে মিল্টন সমাদ্দারকে আটক করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। এরপর বৃহস্পতিবার (২ মে) মিরপুর মডেল থানায় প্রতারণার অভিযোগে একটি মামলা করা হয়। মামলায় মিল্টনের সহযোগী কিশোর বালা নামে একজনকে আসামি করা হয়।
মামলার এজাহারে বলা হয়, মামলার বাদী সঙ্গীয় অফিসার ফোর্সসহ মিরপুরে চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ার সেন্টারে হাজির হলে আসামি মিল্টন সমাদ্দার পালানোর চেষ্টা করেন। এসময় তাকে আটক করা হয়।
পরে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি জানান যে, তিনি কোনো নিবন্ধিত ডাক্তার নন এবং তার ওই প্রতিষ্ঠানে তিনি নিবন্ধিত কোনো ডাক্তার নিয়োগ দেননি। তিনি চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ার সেবার নামে প্রতিষ্ঠান তৈরি করে নিজে ডাক্তার সেজে এজাহারনামীয় পলাতক আসামি কিশোর বালার সঙ্গে পরস্পর যোগসাজশে প্রতারণামূলকভাবে বিভিন্ন চিকিৎসা করেন।
এছাড়াও ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ ও ইমোর মাধ্যমে ক্রিয়েটিভ কনটেন্ট তৈরি করে মিল্টন সমাদ্দার ১ কোটি ২০ লাখ ফ্রেন্ড ফলোয়ারের মধ্যে ছড়িয়ে দিয়ে প্রতারণামূলকভাবে অর্থ উপার্জন করেন।
মিল্টনের প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন কাগজপত্র ও তার টেবিলে থাকা ডেথ সার্টিফিকেট, দুটি স্ট্যাম্প সিল পাওয়া যার একটিতে ইংরেজিতে এমডি মহিদ খান (Md Mohid Khan) অন্যটিতে বাংলায় আসামি মিল্টন সমাদ্দারের নাম লেখা। আসামি মিল্টন সমাদ্দার নিজে ডাক্তার সেজে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে মৃত সার্টিফিকেটধারী ব্যক্তিদের মৃত ঘোষণা করেন। জালজালিয়াতির মাধ্যমে মৃত্যুর সনদপত্রে ভুয়া ডাক্তারের স্বাক্ষর ও সিল এবং নিজে ডাক্তার সেজে স্বাক্ষর ও সিল দেন। মৃত ব্যক্তিদের আত্মীয়স্বজনের কাছে মৃত্যুর সনদপত্র প্রদান করেন।
মামলার এজাহারে আরও বলা হয়, প্রাথমিক তদন্তে জানা যায়, আসামি মিল্টন সমাদ্দার দীর্ঘদিন ধরে মানবতার সেবা ও চিকিৎসার নামে বিভিন্ন বয়স্ক এবং শিশুকে নিয়ে শারীরিক, মানসিক আঘাত করে, কখনো কখনো তাদের সুচিকিৎসার নাম করে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গ নিয়ে বিক্রি করেন মর্মে বিভিন্ন ইলেকট্রনিক মিডিয়া, সোশ্যাল মিডিয়ায় ফলাওভাবে প্রচার হয়েছে।
আসামি একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার না হয়েও সেবার নামে অজ্ঞাতনামা, ওয়ারিশবিহীন ব্যক্তিদের নিয়ে চিকিৎসা প্রদান না করে, খাবারের যথাযথমান বজায় না রেখে বিভিন্ন মানুষকে মৃত্যুর কোলে ঠেলে দিয়েছেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে জালজালিয়াতির মাধ্যমে ৫০ জনের নামে মৃত সার্টিফিকেট দিয়েছেন। যাদের মৃত্যুর সঠিক কারণ উদঘাটিত হয়নি।
এসআর
মন্তব্য করুন: