অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) আলেপউদ্দিনের বিরুদ্ধে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডসহ নানা গুরুতর অপরাধে জড়িত থাকার তথ্য পাওয়া গেছে।
তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, র্যাব-১১ এ কর্মরত থাকাকালীন তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করে একাধিক ব্যক্তিকে ক্রসফায়ারে দিয়েছেন এবং কিছু নির্দোষ ব্যক্তিকে জঙ্গি তকমা দিয়ে নির্যাতন করেছেন।
বিশ্বস্ত সূত্রের বরাত দিয়ে জানা যায়, আলেপউদ্দিন দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতার অপব্যবহার করে আসছিলেন।
এমনকি ভালো মানুষকে জঙ্গি হিসাবে গ্রেফতার করে ক্রসফায়ার দেওয়ার ভয় দেখিয়ে আসামির স্ত্রীকে ধর্ষণ করার মতো জঘন্য অপরাধও তিনি করেছেন।
জিম্মি করে দফায় দফায় ধর্ষণ করার ফলে এক পর্যায়ে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ভুক্তভোগী মারা যায়।
এদিকে, তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে। পুলিশের উচ্চপর্যায়ের একটি দল বিষয়টি খতিয়ে দেখছে বলে জানা গেছে।
যদিও অতীতে তিনি সাহসিকতা ও জঙ্গি দমনের জন্য রাষ্ট্রীয় পুরস্কার পেয়েছিলেন, তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এসব বিষয় নতুন করে আলোচনায় এসেছে।
২০১১ সালে বিসিএস পুলিশ ক্যাডারে যোগ দিয়ে আলেপউদ্দিন দীর্ঘদিন র্যাবের বিভিন্ন ইউনিটে দায়িত্ব পালন করেন। তবে, তার কর্মকাণ্ড নিয়ে বাহিনীর ভেতরেও নানা আলোচনা-সমালোচনা ছিল।
বিশেষ করে, জঙ্গিবাদ দমনের নামে নির্বিচারে গ্রেফতার ও নির্যাতনের অভিযোগ তার বিরুদ্ধে বেশ কয়েকবার উঠেছে।
সম্প্রতি, তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলার তথ্য পাওয়া গেছে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাকে গ্রেফতার করেছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে এবং তার বিরুদ্ধে যথাযথ তদন্ত পরিচালিত হচ্ছে।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, ২০১১ সালে ৩১তম বিসিএস পুলিশ ক্যাডারে এসপি হিসাবে সুপারিশপ্রাপ্ত হন আলেপ উদ্দিন। বাড়ি কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলায়।
পোস্টিং পেয়ে ২০১৩ সালের ১৫ জানুয়ারি এসপি হিসাবে তিনি নারায়ণগঞ্জে র্যাব-১১ এর গোয়েন্দা ইউনিটে যোগদান করেন।
চাকরিতে যোগ দিয়েই ছাত্রলীগের তকমা লাগিয়ে নিজেকে ব্যাপক ক্ষমতাধর পুলিশ কর্মকর্তা হিসাবে পরিচয় দিতেন। তিনি ১৩ বছরের চাকরি জীবনে ১২ বছরই ছিলেন র্যাবের বিভিন্ন ইউনিটে।
র্যাব থেকে একবার রংপুর রেঞ্জে বদলি করার ৭ দিনের মাথায় আবার র্যাবেই ফিরে আসেন পতিত সরকারের ক্ষমতাধর এই অতিরিক্ত পুলিশ সুপার। সাহসিকতা ও জঙ্গি দমনের জন্য রাষ্ট্রীয় পদক পিপিএম ও বিপিএম পুরস্কারেও ভূষিত করা হয় তাকে।
জুলাই গণ-অভু্যত্থানে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমাতে টার্গেট শুটার হিসাবে নারায়ণগঞ্জ, যাত্রাবাড়ী ও শনিরআখড়ায় অস্ত্র হাতে ছাত্রলীগের ক্যাডারের ভূমিকায় ছিলেন এই আলেপ উদ্দিন।
৫ আগস্টের পর টার্গেট শুটার হিসাবে ছাত্র-জনতার আন্দোলন প্রতিহত করতে সশস্ত্র ভূমিকা রাখার তথ্য পেয়ে বরিশাল রেঞ্জ ডিআইজির কার্যালয়ে সংযুক্ত থাকাবস্থায়ই গত ১২ নভেম্বর তুলে নিয়ে আসে পুলিশের গোয়েন্দা কর্মকর্তারা।
এরপর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যাত্রাবাড়ীতে ৫ আগস্ট নিহত জোবায়ের ওমর খান হত্যা মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে দুই দিনের রিমান্ডে নিয়ে আসে।
তবে তিনি ওই মামলায় এজাহারভুক্ত আসামি ছিলেন না। প্রাথমিক তদনে্ত এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তার সম্পৃক্ততা পায় পুলিশ। ২২ আগস্ট শেখ হাসিনাসহ ১২৭ জনকে আসামি করে যাত্রাবাড়ী থানায় মামলা করেছিলেন নিহত জোবায়েরের ভাই জাবেদ ইমরান খান।
১৩ নভেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে আলেপউদ্দিনকে সাময়িক বরখাস্তের তথ্য জানানো হয়।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আলেপউদ্দিন (বরিশাল রেঞ্জ পুলিশ কার্যালয়ে সংযুক্ত) রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানার দায়ের করা মামলায় গত ১৩ নভেম্বর গ্রেফতার করা হয়। পরের দিন তাকে আদালতে পাঠানো হয়।
তাকে ২০১৮ সালের সরকারি আইনের ৩৯(২) ধারার বিধান অনুযায়ী সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। বরখাস্তকালীন তিনি খোরপোষ ভাতা প্রাপ্য হবেন।
এদিকে আলেপউদ্দিনকে চিনেন, জানেন এমন একজন র্যাব সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এই কর্মকর্তার চারিত্রিক সমস্যা ছিল।
এ বিষয়টি র্যাবের অন্য কর্মকর্তারাও জানতেন। কিন্তু ছাত্রলীগ নেতা হিসাবে দাপট থাকায় কেউ তাকে কিছু বলত না। এ কারণে তিনি বেপরোয়া হয়ে উঠেছিলেন।
আসলে কি করতেন আলেপউদ্দিন জানতে চাইলে ওই র্যাব সদস্য বলেন, ‘বিভিন্ন আসামি ধরে এনে তার স্ত্রীকে ক্রসফায়ার দেওয়ার ভয় দেখাতেন।
এভাবে তিনি ভয় দেখিয়ে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করতেন। ভাইরাল হওয়া এক আসামির রোজাদার স্ত্রীকে ধর্ষণ করার যে অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে তা সঠিক হতে পারে।
আলেপউদ্দিনের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা যাচাই করে দোষী সাব্যস্ত হলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
এসআর
মন্তব্য করুন: