রংপুরে তাবলিগ জামাতের তিন দিনব্যাপী বিভাগীয় ইজতেমা
আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) ভোরে ফজরের নামাজ শেষে আম বয়ানের মধ্য দিয়ে এবারের ইজতেমার কার্যক্রম শুরু হয়। বয়ানে কোরআন ও হাদিসের আলোকে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের নির্দেশনা মেনে চলার গুরুত্ব তুলে ধরা হয়।
ইজতেমার আয়োজন করা হয়েছে রংপুর মহানগরের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের আমাশু কুকরুল এলাকায়, যেখানে শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) দুপুর নাগাদ আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে তিন দিনের এ জমায়েত শেষ হবে। আয়োজকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, মাঠজুড়ে শামিয়ানাসহ পানির লাইন, বিদ্যুৎ সংযোগ, সাইকেল গ্যারেজ এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় স্থাপনা তৈরি করে প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।
২০১০ সাল থেকে রংপুরে নিয়মিতভাবে ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে; এবার এটি নবম আয়োজন। বিশাল মাঠটির ধারণক্ষমতা প্রায় পাঁচ লাখ হলেও আয়োজকদের ধারণা, এবার প্রায় ১০ লাখ মুসল্লির সমাগম হতে পারে। ইতোমধ্যেই রংপুর বিভাগের আট জেলা—পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, নীলফামারী, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম ও রংপুর—থেকে বহু মানুষ ইজতেমা মাঠে এসে পৌঁছেছেন। পাশাপাশি ভারত, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়াসহ বিভিন্ন দেশ থেকেও তাবলিগ জামাতের মেহমানরা যোগ দিয়েছেন।
আয়োজক কমিটির সদস্য খালেকুজ্জামান রাজা জানান, প্রায় ২০০ বিদেশি অতিথি এই ইজতেমায় উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে। তিনি বলেন, জেলা ইজতেমার পরিবর্তে এবার বিভাগীয় পর্যায়ের আয়োজন হওয়ায় অনেক বেশি মুসল্লির সমাগম হওয়ার প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
বুধবার সকাল থেকেই আশপাশের জেলা ও উপজেলাগুলো থেকে মুসল্লিরা মাঠে আসা শুরু করেন। রাতের মধ্যেই মাঠ মানুষে ভরে যায়। বৃহস্পতিবার ভোরে ফজরের নামাজ শেষে আম বয়ান শুরু হলে চারদিকে ধর্মীয় আবহ সৃষ্টি হয়।
ইজতেমা মাঠে দায়িত্বে থাকা হাফিজুল ইসলাম জানান, বুধবার বিকেল থেকে মানুষের আগমন বাড়তে থাকে এবং রাতের মধ্যেই বেশিরভাগ মুসল্লি মাঠে অবস্থান নেন। আট জেলাসহ বিভিন্ন স্থান থেকে বহু মানুষ অংশ নিচ্ছেন, আর বিদেশি অতিথিদের উপস্থিতি ইজতেমায় ধর্মীয় ঐক্যের বার্তা যোগ করেছে।
মুসল্লি সাউদ হোসেন বলেন, বাসা কাছাকাছি হলেও তিনি আগের রাতেই ইজতেমা মাঠে চলে এসেছেন। তিনি ইজতেমার নিয়ম অনুসরণ করে ইবাদতে মনোযোগী হতে চান এবং আল্লাহর রহমত লাভের প্রত্যাশা করেন।
স্থানীয় সংগঠক শামীমুজ্জামান শামীম জানান, মাঠে আলোর জন্য বিদ্যুতের পাশাপাশি শতাধিক জেনারেটর রাখা হয়েছে। ওজু ও গোসলের জন্য পর্যাপ্ত পানি ব্যবস্থা তৈরি করা হয়েছে, যাতে একসঙ্গে পাঁচ হাজারের মতো মানুষ ওজু করতে পারেন। আগত মুসল্লিদের স্বাস্থ্যসেবায় অর্ধশতাধিক মেডিকেল টিম মাঠজুড়ে কাজ করছে।
নিরাপত্তা ব্যবস্থাও জোরদার করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কয়েক স্তরের নিরাপত্তা বলয় গড়ে তুলেছে। সাদা পোশাকে পুলিশি নজরদারি এবং সার্বক্ষণিক তদারকির জন্য নিয়ন্ত্রণকক্ষও খোলা হয়েছে।
রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মজিদ আলী জানান, ইজতেমাকে নির্বিঘ্ন ও শান্তিপূর্ণ রাখতে আয়োজকদের সঙ্গে সমন্বয় করে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ, নিরাপত্তা এবং ভিড় ব্যবস্থাপনায় পুলিশ ও স্বেচ্ছাসেবকরা একসঙ্গে কাজ করছে বলে তিনি জানান।
আগামী শনিবার দুপুরের আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে এবারের বিভাগীয় ইজতেমা শেষ হবে। এরপর চিল্লার উদ্দেশ্যে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছোট-বড় জামাতগুলো ছড়িয়ে পড়বে।
এসআর
মন্তব্য করুন: