[email protected] শুক্রবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৫
১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

জলবায়ুর সঙ্গে নারীর যুদ্ধ, জলে জ্বলে টিকে থাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২৮ নভেম্বর ২০২৫ ১০:৪৪ এএম

বাংলাদেশের উপকূলীয় জেলা বাগেরহাট—চারদিকে নদী, খাল

আর জলাভূমিতে ঘেরা এই জনপদ প্রকৃতির সৌন্দর্যে ভরপুর হলেও দুর্যোগের ক্ষতও বয়ে বেড়ায়। লোনা বাতাস, ঝড়ের ভয়, নদীর অস্থিরতা—এসবের মধ্যেই প্রতিদিন নতুন করে জীবনযুদ্ধে নামেন এখানকার নারীরা।

উপকূলের মানুষের প্রধান জীবিকা মাছ ধরা এবং মাছ প্রক্রিয়াজাত করা। পুরুষেরা নদীতে যান, আর সংসারের ভরপুর দায়িত্ব সামলান নারীরা। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে রামপাল, মোংলা, শরণখোলা, মোড়েলগঞ্জ থেকে কচুয়া পর্যন্ত এলাকাজুড়ে মানুষের জীবন আরও অনিশ্চিত হয়ে উঠেছে — অনিয়মিত বৃষ্টি, লোনাজল বৃদ্ধি, ঘূর্ণিঝড় আর নদীভাঙন যেন ছায়ার মতো পিছু লেগে থাকে।

মাছ কমে যাওয়ায় অধিকাংশ পরিবার আয় হারাচ্ছে। লোনা পানির কারণে জমিতে ধান, শাকসবজি ও ফলগাছ আর আগের মতো জন্মায় না—যে কৃষিকাজে নারীরা একসময় সহায়তা করতেন, সে পথ প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে।

ঘূর্ণিঝড় সিডর, আইলা, ফনি, বুলবুলের ধাক্কা বহু পরিবারকে বারবার নিঃস্ব করেছে। জাল-নৌকা নষ্ট হওয়া থেকে শুরু করে ঘরবাড়ি ধ্বংস—সব বিপর্যয়ের পর গুছিয়ে ওঠার দায়ও অনেকটাই থাকে নারীদের কাঁধে।

রামপালে আয়েশা বেগমের অভিজ্ঞতা—স্বামী নদীতে গেলে কখন ফিরবেন নিশ্চিত নয়। ঝড় উঠলে রাতভর দুশ্চিন্তায় কাটে। একসময় বাড়ির পাশে সবজি বাগান ছিল; লোনাজলে সব শেষ হয়ে গেছে।

মোংলার হাসিনা খাতুন জানান, আগে প্রতিদিন মাছ মিললেও এখন সপ্তাহে কয়েকদিনও পাওয়া যায় না। মাছ না থাকলে তিনি শুকনো মাছ বিক্রি করেন, কিন্তু কাজ সবসময় পাওয়া যায় না। ঘূর্ণিঝড় হলে ঘরবাড়ি নষ্ট হয়ে যায়, আবার শূন্য হাতেই শুরু করতে হয়।

শরণখোলার মরিয়ম খাতুনের সবচেয়ে বড় সংগ্রাম—পানির অভাব। রেইনওয়াটার ট্যাংকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইন; পানি শেষ হয়ে গেলে আরও দূরে যেতে হয়। পানির জন্য সময় খরচ হওয়ায় ঘরের কাজের বড় অংশ আটকে যায়।

জেসমিনের অভিজ্ঞতা আরও কঠিন—তিনি মাঝেমধ্যে স্বামীর সঙ্গে নদীতে মাছ ধরতে যান। নদীতে নারীদের কাজ করা ঝুঁকিপূর্ণ হলেও সংসারের টান তাকে তা করতেই বাধ্য করে।

স্থানীয় গবেষক নূর আলম শেখ বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে বড় চাপ পড়ে নারীদের ওপর। আয় কমে যাওয়া, পানি সংকট, ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস—সব মিলিয়ে তারা দ্বিগুণ বিপর্যয়ের মুখে। তার মতে, নারীদের কর্মসংস্থান, নিরাপদ আশ্রয়, মিঠাপানির ব্যবস্থা, টেকসই বাঁধ নির্মাণ এবং বিকল্প জীবিকার ব্যবস্থা না করলে ভবিষ্যৎ আরও কঠিন হয়ে উঠবে।

 

এসআর

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর