খুলনার বিভিন্ন ঘাটে খালাস হওয়া ইউরিয়া সার নিয়মিতভাবে কালোবাজারে চলে যাচ্ছে—এমন তথ্য সামনে আসার পর প্রশাসনের নজর পড়েছে চুয়াডাঙ্গায় জব্দ হওয়া প্রায় ২০ টন সারকে কেন্দ্র করে।
তবে স্থানীয় সূত্র বলছে, এসব অনিয়ম বরাবরই চলে আসছে। সরকারি গুদামের কিছু কর্মকর্তা, পরিবহণ ব্যবসায়ী এবং প্রভাবশালী সিন্ডিকেট জড়িত থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে; ফলে কৃষি খাত পড়ছে মারাত্মক বিপর্যয়ের মুখে। অভিযোগ রয়েছে, বিসিআইসি বিষয়টি জেনেও যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
বিসিআইসির খুলনা ক্যাম্প জানায়, চলতি বছরে খুলনার বিভিন্ন ঘাটে এক লাখ ৩৩ হাজার ৬৫০ টন ইউরিয়া সার খালাসের অপেক্ষায় রয়েছে। অলিম্পিয়া লগার, গ্লোবাল এম্বিশন, নিকোলাস এ ও লটিকা নারি—এই চারটি জাহাজে করে সার এসেছে দেশে। এসব সার দেশের ৩৪টি গুদামে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্বে রয়েছে সামিট অ্যাসোসিয়েটস, যারা পুনরায় জুয়েল ট্রান্সপোর্টকে সাব–কন্ট্রাক্ট দিয়েছে।
জাহাজ থেকে সার নামানোর পর ফিডার ভেসেলে করে নির্দিষ্ট ঘাটে এনে বস্তাবন্দি করা হয় এবং পরে পাঠানো হয় সার গুদামে। সেখান থেকে ডিলাররা বরাদ্দ অনুযায়ী কৃষকের কাছে তা বিক্রি করেন। সরকারি তত্ত্বাবধানে পরিচালিত পুরো এই প্রক্রিয়ায় বড় ধরনের জালিয়াতি হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
সার ব্যবসায়ীদের মতে, খুলনার ঘাট থেকে ট্রাকে ওঠানো ইউরিয়া সার নির্ধারিত গুদামে না গিয়ে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ কালোবাজারে বিক্রি হয়। কমদামে এসব সার ব্যবসায়ীদের কাছে তুলে দেওয়া হয়, যেখানে সিন্ডিকেটে জড়িত থাকে গুদাম কর্মকর্তারা ও পরিবহণ ব্যবসায়ীরা। কাগজে-কলমে সার গুদামে সংরক্ষিত দেখানো হলেও বাস্তবে তা বড় ব্যবসায়ীদের কাছে চলে যায়।
শিরোমনি ঘাটের এক ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, “ট্রান্সপোর্ট মালিক ও গুদাম কর্মকর্তারা হাত মিলিয়ে ট্রাকভর্তি সার সরাসরি ব্যবসায়ীদের কাছে পাঠিয়ে দেন। এক ট্রাক (২০ টন) সার কালোবাজারে বিক্রি করলে প্রায় আট লাখ টাকা লাভ হয়, যা তারা নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেন।”
৮ নভেম্বর গভীর রাতে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার গোষ্টবিহার গ্রাম থেকে ২০ টন ইউরিয়া সারসহ একটি ট্রাক আটক করে উপজেলা কৃষি বিভাগ। ট্রাকটি স্থানীয় ব্যবসায়ী শামীম রেজার গুদামের উদ্দেশ্যে যাচ্ছিল। ভ্রাম্যমাণ আদালত তাকে এক মাসের কারাদণ্ড ও ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেন।
তবে চুয়াডাঙ্গা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আনিছুর রহমান স্বীকার করেন, “ব্যবসায়ী বৈধ কাগজ দেখাতে না পারায় আমরা তাকে দণ্ড দিয়েছি। কিন্তু সার কোথা থেকে এসেছে—এটি জানার চেষ্টা করিনি; এটি আমাদের ভুল।”
জানা গেছে, আটক ট্রাকটি জুয়েল ট্রান্সপোর্টের। ওই সময় দেশে সামিট অ্যাসোসিয়েটস ছাড়া অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের সার আসেনি। ফলে সিন্ডিকেটের সঙ্গে এই প্রতিষ্ঠানের কেউ না কেউ জড়িত থাকতে পারে—এমন সন্দেহ উঠলেও আনুষ্ঠানিক তদন্ত হয়নি।
এ বিষয়ে সামিট অ্যাসোসিয়েটসের ম্যানেজার মো. শামীম আহসান বলেন, “জুয়েল ট্রান্সপোর্ট আমাদের হয়ে সার পরিবহন করে। তবে ডিলার সারটির মালিকানা স্বীকার করায় আমরা পরিবহণ প্রতিষ্ঠানের ওপর দোষ চাপাতে পারছি না।”
বিসিআইসির মহাব্যবস্থাপক (বাণিজ্যিক) সেরনিয়াবাত রেজাউল বারী জানান, “চাহিদা অনুযায়ী সার গুদামে পৌঁছেছে কি না—আমরা সেটিই দেখি। সামিট অ্যাসোসিয়েটস জানিয়েছে তারা বরাদ্দ অনুযায়ী সার সরবরাহ করবে। তাই আর তদন্ত করা হয়নি।”
এসআর
মন্তব্য করুন: