পাকিস্তানে যুদ্ধে গিয়ে নিহত গোপালগঞ্জের তরুণ রতন ঢালী

পাকিস্তানের নিষিদ্ধ সংগঠন তেহরিক-ই-তালেবান (টিটিপি)-এর হয়ে যুদ্ধ করতে গিয়ে নিহত হয়েছেন গোপালগঞ্জের তরুণ রতন ঢালী (২৪)।

 চলতি বছরের ২৬ সেপ্টেম্বর পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর যৌথ অভিযানে তিনি নিহত হন। একই অভিযানে আরও এক বাংলাদেশি যুবক ফয়সাল হোসেন (২২) মারা যান বলে নিশ্চিত করেছে পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ।

নিহত রতন গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার গোহালা ইউনিয়নের হরিচরপুর গ্রামের বাসিন্দা। তার বাবা আনোয়ার ঢালী পেশায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাচালক। পরিবারের অভিযোগ, রতন প্রায় দেড় বছর ধরে নিখোঁজ ছিলেন।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্স (সিটিটিসি) ইউনিটের পুলিশ সুপার রওশন সাদিয়া আফরোজ এবং মুকসুদপুর থানার সিন্ধিয়াঘাট পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আলমগীর হোসেন।

ভারত হয়ে পাকিস্তানে যাত্রা

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, রতন ও ফয়সাল গত বছরের ২৭ মার্চ বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে প্রবেশ করেন। সেখান থেকে অবৈধভাবে আফগানিস্তান হয়ে পাকিস্তানে যান তারা। পরে দুজনই টিটিপিতে যোগ দেন। যাওয়ার আগে তারা ঢাকার একটি ইজামা সেন্টারে কাজ করতেন।

পরিবারের অজান্তে ‘দুবাই যাওয়ার কথা’ বলেছিলেন রতন

রতনের মা সেলিনা বেগম বলেন,

“২০২৪ সালের রোজার ঈদে শেষবার রতন ভিডিও কল দিয়েছিল। তখন সে বলেছিল, ‘মা, আমি দুবাই যাচ্ছি। এখন দিল্লিতে আছি।’ আমি জানতে চেয়েছিলাম, টাকা পেলি কোথায়? রতন বলেছিল, ‘যেখানে কাজ করি, তারাই টাকার ব্যবস্থা করেছে।’ এরপর আর তার সঙ্গে কথা হয়নি।”

তিনি আরও জানান, শেষবার অন্য একজনের ফোনে কথা বলেছিলেন রতনের সঙ্গে। সেই সময় রতন তাকে অসুস্থ শুনে ১০ হাজার টাকা পাঠিয়েছিল।

রতনের বাবা আনোয়ার ঢালী বলেন,

“রতন যাওয়ার কয়েক মাস আগে বাড়ি এসে জন্মনিবন্ধন ও ছবি নিয়ে গিয়েছিল। বলেছিল, দুবাই যাওয়ার জন্য দরকার। কে পাঠাচ্ছে জানতে চাইলে বলেছিল, এতে ঝামেলা হবে। পরে পুলিশ দুইবার খুঁজতে আসে।”

আনোয়ার ঢালী আরও জানান, রতন ক্লাস সিক্স পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে। পরে মোবাইল সার্ভিসিংয়ের কাজ করত। এরপর ঢাকায় একটি ইজামা সেন্টারে যোগ দেয়। “ওই সময় থেকেই ওর আচরণে পরিবর্তন আসে,” বলেন তিনি।

টিটিপিতে তিন বাংলাদেশির যোগদান

গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের ২৭ এপ্রিল পাকিস্তানের ওয়াজিরিস্তানে অভিযান চালিয়ে ৫৪ জন টিটিপি যোদ্ধাকে হত্যা করে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী। নিহতদের মধ্যে ছিলেন বাংলাদেশের সাভারের আহমেদ জুবায়ের ওরফে যুবরাজ। এরপর তদন্তে জানা যায়, টিটিপিতে যোগ দেওয়া বাংলাদেশিদের মধ্যে রতন ঢালী ও ফয়সাল হোসেনও ছিলেন।

বর্তমানে বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ পুলিশের সিটিটিসি ইউনিট তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে।