[email protected] শনিবার, ৮ নভেম্বর ২০২৫
২৩ কার্তিক ১৪৩২

অসময়ের বৃষ্টিতে চাঁপাইনবাবগঞ্জে ধানচাষে বিপর্যয়, দিশাহারা কৃষক

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ৭ নভেম্বর ২০২৫ ৫:২১ পিএম

চাঁপাইনবাবগঞ্জে অকাল বৃষ্টিপাতে আমন ধানচাষে ব্যাপক ক্ষতি


হয়েছে। পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডের কালুপুর এলাকার কৃষক আব্দুস সাত্তারসহ বহু কৃষক এখন দিশাহারা। তিনি দোকান থেকে বাকিতে সার, বীজ ও অন্যান্য উপকরণ কিনে সাড়ে ১২ বিঘা জমিতে আমন ধানের চাষ করেছিলেন। ধান ঘরে তোলার প্রস্তুতি চলছিল, কিন্তু হঠাৎ কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে তাঁর প্রায় আট বিঘা জমির ধান নুইয়ে পড়ে যায়। ফলে দেনা শোধ ও মহাজনের ফুরত দেওয়ার পরিকল্পনা ভেস্তে যায়।

সরজমিনে দেখা গেছে, অধিকাংশ মাঠে ধান কাদা ও পানিতে ডুবে গেছে। কোথাও কোথাও পানি নেমে গেলেও ধানের দানা নষ্ট হচ্ছে। ভেজা আবহাওয়ায় পোকামাকড়ের আক্রমণ বেড়েছে, ফলে বাড়তি কীটনাশক ব্যবহার করতে হচ্ছে। অন্যদিকে হাঁটু পানিতে ধান কাটতে হচ্ছে বলে শ্রমিকরাও বেশি মজুরি চাইছেন।

কৃষকদের ভাষ্য, প্রতি বিঘায় যেখানে আগে ৩০–৩৫ মণ ধানের আশা ছিল, সেখানে এখন ১৮–২২ মণ পাওয়া নিয়েই অনিশ্চয়তা। এর মধ্যেই মহাজনকে বিঘা প্রতি ১০ মণ ধান ফুরত হিসেবে দিতে হবে। ফলে লাভ তো দূরের কথা, মূল খরচ তুলতেই হিমশিম খাচ্ছেন তারা।

কালুপুরের কৃষক আব্দুস সাত্তার বলেন, “বৃষ্টিতে জমির ধান নষ্ট হয়ে গেছে। দোকানে সার-বিষের ২৫ হাজার টাকার দেনা আছে। ধান কাটতে গেলে কাদা জমিতে গাড়ি ঢুকছে না, শ্রমিকরাও বাড়তি মজুরি চাইছে। এখন কেবল দেনা শোধ নিয়েই চিন্তায় আছি।”

আরেক কৃষক মনিরুল ইসলাম বলেন, “ঋণ করে পাঁচ বিঘা জমিতে ধান করেছিলাম। আগে ভাবছিলাম প্রতি বিঘায় ৩০–৩৫ মণ পাবো, কিন্তু এখন ২০–২৫ মণও কঠিন। ধার করা টাকা কীভাবে শোধ করব বুঝতে পারছি না। সরকার অনুদান দিলে হয়তো আবার ঘুরে দাঁড়ানো যাবে।”

কৃষক আনাসারুল হক জানান, তাঁর ছয় বিঘা জমির মধ্যে পাঁচ বিঘা মোটা ও এক বিঘা আতব ধান ছিল। বৃষ্টির পর প্রায় সব ধান নুইয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, “এখন পোকা দমনে বিঘা প্রতি প্রায় ১২০০ টাকা খরচ হচ্ছে। আগে যেখানে ২৩ মণ কাটলে তিন মণ দিতে হতো, এখন ৫–৬ মণ দিতে হচ্ছে। শ্রমিক মজুরি ৪০০ টাকা থেকে বেড়ে ৬০০–৭০০ টাকা হয়েছে। কোনো উপায় নেই, কাজ করাতেই হচ্ছে।”

চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. ইয়াছিন আলী জানান, অসময়ের ভারী বৃষ্টিতে জেলার ধান, ভুট্টা ও সবজি চাষে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে আমন ধান সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। তিনি বলেন, “ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণে মাঠ পর্যায়ে যাচাই চলছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের জন্য প্রণোদনা দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যেসব ধানের দানা শক্ত হয়েছে সেগুলোতে স্প্রে প্রয়োজন নেই, বাকি ক্ষেতগুলোতে প্রয়োজনে কীটনাশক ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। রবি মৌসুমে ভালো ফলনের জন্য কৃষকদের সহায়তাও দেওয়া হবে।”

কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, গত শুক্রবার রাত থেকে শনিবার ভোর পর্যন্ত চাঁপাইনবাবগঞ্জে গড়ে ১৯১ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে—যা গত দশ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এ বৃষ্টিতে জেলায় প্রায় ৪ হাজার ৪৫৯ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত, যার বড় অংশই আমন ধান।

 

এসআর

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর