[email protected] শুক্রবার, ৭ নভেম্বর ২০২৫
২২ কার্তিক ১৪৩২

লোকসানের আশঙ্কায় আলু ব্যবসায়ী ও কৃষকরা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ৬ নভেম্বর ২০২৫ ১১:০১ পিএম

চাঁদপুরের কচুয়ায় আলুচাষিরা কঠিন আর্থিক সংকটে পড়েছেন।

 

স্থানীয় হিমাগারগুলোতে সংরক্ষিত আলুর বড় একটি অংশ এখনো বিক্রি হয়নি। নভেম্বরের মধ্যে হিমাগার খালি করার কথা থাকলেও রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে আগাম জাতের আলু আসায় পুরোনো আলুর চাহিদা অনেক কমে গেছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন চাষি, ব্যবসায়ী ও হিমাগার মালিকরা।

চাষিদের হিসাব অনুযায়ী, মাঠে উৎপাদন থেকে শুরু করে সংরক্ষণ পর্যন্ত প্রতি কেজি আলুর খরচ পড়েছে ২৮ থেকে ২৯ টাকা। অথচ বর্তমানে বাজারে ভালো মানের আলু বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৭ থেকে ৮ টাকায়। এতে করে তারা ব্যাপক লোকসানের মুখে পড়ছেন। অনেকেই বলছেন, এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে পরের রবি মৌসুমে আলু চাষে আগ্রহ হারাবেন কৃষকেরা, ফলে বহু জমি অনাবাদি থেকে যেতে পারে।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এ বছর কচুয়ায় ১ হাজার ৮২৫ হেক্টর জমিতে আলুর আবাদ হয়েছে। অধিক লাভের আশায় স্থানীয় তিনটি হিমাগারে বিপুল পরিমাণ আলু সংরক্ষণ করা হয়। বাতাপুকুরীয়ার মনার্ক কোল্ড স্টোরেজে এ বছর ২ লাখ ৮৪ হাজার বস্তা আলু মজুত হলেও এখনো প্রায় ১ লাখ ৫৪ হাজার বস্তা অবিক্রি রয়েছে। অন্য দুই হিমাগারেও ১ লাখ ৫৮ হাজার ৯৯৫ বস্তার মধ্যে প্রায় অর্ধলক্ষ বস্তা বিক্রি হয়নি।

চাষি ও ব্যবসায়ীরা জানান, এ বছর দেশে আলুর উৎপাদন চাহিদার চেয়ে বেশি হয়েছে। পাশাপাশি সারা বছর বিভিন্ন ধরনের সবজি উৎপাদনের কারণে আলুর বাজারে চাপ পড়েছে। আগে কচুয়ার আলুর আলাদা সুনাম থাকলেও বর্তমানে অন্য অনেক অঞ্চলে ভালো মানের আলু উৎপাদন হচ্ছে, ফলে বাইরের বাজারে কচুয়ার আলুর চাহিদা কমে গেছে। তাছাড়া আগের মতো এ বছর পর্যাপ্ত পরিমাণ আলু রপ্তানিও হয়নি।

স্থানীয় চাষি নবীর হোসেন, আলী হোসেন ও মহসিন পাটওয়ারী জানান, প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) আলু সংরক্ষণে খরচ হয়েছে ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা। এখন সেটি বিক্রি করতে হচ্ছে মাত্র ৪৫০ থেকে ৬৫০ টাকায়। তাই অনেকেই হিমাগার থেকে আলু বের করতেই চাইছেন না।

মনার্ক কোল্ড স্টোরেজের ব্যবসায়ী ইব্রাহীম হোসেন বলেন, “বেশ কিছুদিন ধরে আলু বিক্রি করার চেষ্টা করছি, কিন্তু কোনো ক্রেতা নেই। এভাবে চললে আগামী মৌসুমে চাষি আলু চাষে আগ্রহ হারাবেন।”

কোল্ড স্টোরেজটির ব্যবস্থাপক কাজী মো. মিজানুর রহমান জানান, “বর্তমান পরিস্থিতিতে কোম্পানিটিও বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে।”

এ বিষয়ে কচুয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তপু আহমেদ বলেন, “এ বছর উৎপাদন চাহিদার তুলনায় বেশি হয়েছে, তাই বাজারে কিছুটা সংকট তৈরি হয়েছে। আমরা কৃষকদের উন্নত জাতের আলু চাষে উৎসাহ ও পরামর্শ দিচ্ছি, যাতে ভবিষ্যতে এমন সমস্যায় না পড়তে হয়।”

 

এসআর

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর