[email protected] শুক্রবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৫
১৫ কার্তিক ১৪৩২

খতিব মহিবুল্লাহ নিখোঁজ নাটক: পুলিশ বলছে, ঘটনাটি ছিল সাজানো

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২৮ অক্টোবর ২০২৫ ১২:১৬ পিএম

সংগৃহীত ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক গাজীপুরের টঙ্গী পূর্ব থানাধীন টিএনটি বাজার জামে মসজিদের খতিব আলহাজ ক্বারি মুফতি মহিবুল্লাহ মিয়াজীর নিখোঁজের ঘটনাটি সাজানো নাটক ছিল বলে ধারণা করছে পুলিশ।

তদন্তে সিসিটিভি ফুটেজ, মোবাইল ট্র্যাকিং ও চিকিৎসকের প্রতিবেদনের সঙ্গে খতিবের বক্তব্যে একাধিক অসংগতি ধরা পড়েছে।

পুলিশ জানায়, তদন্তের প্রায় সব দিক পর্যালোচনার পর ঘটনাটিকে ‘স্বেচ্ছানির্মিত নিখোঁজ’ হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে। এ ঘটনায় খতিব মহিবুল্লাহর বিরুদ্ধেই অভিযোগপত্র দাখিলের প্রস্তুতি নিচ্ছে টঙ্গী পূর্ব থানা পুলিশ।

থানা সূত্রে জানা গেছে, সোমবার (২৭ অক্টোবর) রাত ১০টার দিকে মাওলানা মহিবুল্লাহকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় আনা হয়। আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু না জানালেও পুলিশ সূত্র দাবি করেছে, জিজ্ঞাসাবাদের সময় তিনি স্বীকার করেছেন যে ঘটনাটি তার নিজের পরিকল্পনাতেই ঘটেছে।
এ বিষয়ে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (জিএমপি) সদর দপ্তরে শিগগিরই আনুষ্ঠানিক ব্রিফিংয়ের প্রস্তুতি চলছে।

গত বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) সকাল পৌনে ৭টার দিকে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া থানার হেলিপ্যাড বাজার এলাকায় শিকল বাঁধা অবস্থায় খতিব মহিবুল্লাহকে দেখতে পান স্থানীয়রা। পরে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ খবর দিলে পুলিশ গিয়ে তাকে উদ্ধার করে পঞ্চগড় সদর হাসপাতালে ভর্তি করে।

তবে তদন্তে দেখা গেছে, নিখোঁজের আগের দিন (২২ অক্টোবর) সকাল ৭টার দিকে শিলমুন সিএনজি স্ট্যান্ডের সামনের এলাকায় সিসিটিভি ফুটেজে মহিবুল্লাহকে দ্রুত হাঁটতে দেখা যায়। তার আশপাশে কোনো ব্যক্তি, গাড়ি বা অ্যাম্বুলেন্সের উপস্থিতি ছিল না। পরবর্তীতে মোবাইল ট্র্যাকিংয়ে দেখা যায়, তিনি সিরাজগঞ্জ হয়ে নিজেই পঞ্চগড়ে গেছেন।

পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের সিভিল সার্জন জানান, মহিবুল্লাহর শরীরে কোনো দৃশ্যমান আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। তাকে কেবল ব্যথানাশক ওষুধ দেওয়া হয়েছিল।
তদন্ত কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রাথমিকভাবে প্রমাণ মিলেছে যে খতিব নিজেই নিজের পায়ে শিকল বেঁধেছিলেন। তাদের ভাষায়—“ঘটনাটি সম্পূর্ণ তার নিজের সাজানো নাটক।”

তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা আরও জানিয়েছেন, মহিবুল্লাহ কর্তৃক উল্লেখিত ‘হুমকির চিঠি’ সম্পর্কেও অনুসন্ধান চলছে। পুলিশ বলছে, পুরো ঘটনার পেছনে কী উদ্দেশ্য ছিল, তা উদ্ঘাটনের চেষ্টা চলছে।

ঘটনাটি নিয়ে নতুন তথ্য প্রকাশ করেছেন আলজাজিরার সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের সামি। মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে তিনি দাবি করেন, বিশ্লেষিত চারটি সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়—সকাল ৭টা ১৮ মিনিটে মহিবুল্লাহ একাই দ্রুত হেঁটে যাচ্ছেন।

তিনি লিখেছেন, “ফিলিং স্টেশনের সামনে একটি অ্যাম্বুলেন্স এসে হুজুরকে অপহরণ করেছে—এই দাবিটি সিসিটিভি ফুটেজে কোথাও দেখা যায়নি। বরং তাকে একাই হাঁটতে দেখা গেছে।”

জুলকারনাইন আরও জানান, সকাল ৬টা ৫৪ মিনিটে মহিবুল্লাহ শিলমুন এলাকা থেকে রওনা হয়ে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরের ফিলিং স্টেশনে পৌঁছান ৭টা ১৮ মিনিটে। ফিলিং স্টেশনের ব্যবস্থাপক মো. সোলেইমানও নিরাপত্তা সংস্থাকে নিশ্চিত করেছেন—“আমাদের স্টেশনের সামনে থেকে হুজুরকে অপহরণ করা হয়নি।”

পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, সম্পূর্ণ তদন্ত শেষে আদালতে রিপোর্ট দাখিল করা হবে। এদিকে ঘটনাটিকে কেন্দ্র করে এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছ।

এসআর

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর