[email protected] মঙ্গলবার, ৭ অক্টোবর ২০২৫
২২ আশ্বিন ১৪৩২

টঙ্গীতে উপদেষ্টার গাড়ি আটকে শ্রমিকদের বিক্ষোভ

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ৭ অক্টোবর ২০২৫ ৭:০২ পিএম

সংগৃহীত ছবি

গাজীপুরের টঙ্গীতে অন্তর্বর্তী সরকারের সমাজকল্যাণ এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমিন এস মুরশিদের গাড়ি আটকিয়ে বিক্ষোভ করেছেন প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্ট ও মৈত্রী শিল্পের চাকরিচ্যুত কর্মীরা।

গাজীপুরের টঙ্গীতে অন্তর্বর্তী সরকারের সমাজকল্যাণ এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ।মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) বিকেলে সমাজসেবা অধিদপ্তরের প্রধান ফটকের সামনে এ ঘটনা ঘটে।

পরে উপদেষ্টা নিজে বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ শুনে তদন্তের আশ্বাস দিলে পরিস্থিতি শান্ত হয়।

এর আগে দিনভর তিনি টঙ্গীর প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্ট ও মৈত্রী শিল্প কমপ্লেক্স পরিদর্শন করেন।

এ সময় তিনি প্রতিবন্ধী কর্মীদের হাতে তৈরি মুক্তা ড্রিংকিং ওয়াটার, প্লাস্টিক পণ্যসহ বিভিন্ন উৎপাদন ইউনিট ঘুরে দেখেন এবং উৎপাদন মান, কর্মীদের সুবিধা ও কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে খোঁজখবর নেন।

পরিদর্শন শেষে মুক্তা ড্রিংকিং ওয়াটার কারখানায় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে শারমিন এস মুরশিদ বলেন,
‘মুক্তা পানি বাণিজ্যিকভাবে উন্নত মানে উৎপাদন নিশ্চিত করতে আমরা বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছি।

এ ব্র্যান্ডকে কেন্দ্র করে বেশ কিছু উন্নয়ন পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। মৈত্রী শিল্পকে আরও সুশৃঙ্খল ও টেকসইভাবে এগিয়ে নিতে ধারাবাহিক উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি যদিও ইঞ্জিনিয়ার নই, তবে কাজের মান ও গুণগত দিকের প্রতি আমার বিশেষ মনোযোগ থাকবে। কাজের কোয়ালিটি নিশ্চিত করাই হবে আমার মূল ফোকাস।’

এ সময় সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মোহাম্মদ আবু ইউসুফ, মৈত্রী শিল্পের নির্বাহী পরিচালক কাজী মাহবুবুর রহমান ও ম্যানেজার মহসিন উপস্থিত ছিলেন।

উপদেষ্টা পরিদর্শন শেষে বের হওয়ার সময় প্রধান ফটকের সামনে কয়েকজন চাকরিচ্যুত প্রতিবন্ধী কর্মী তার গাড়ি আটকে বিক্ষোভ শুরু করেন।

তারা অভিযোগ করেন, দীর্ঘদিন ধরে প্রতিষ্ঠানটিতে অনিয়ম, দুর্নীতি ও পক্ষপাতমূলক আচরণ চলছে। এসব কারণে প্রকৃত প্রতিবন্ধী কর্মীদের চাকরি থেকে অন্যায়ভাবে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে, অথচ দুর্নীতিতে জড়িত কর্মকর্তারা বহাল তবিয়তে দায়িত্ব পালন করছেন।

বিক্ষোভকারীরা উপদেষ্টার হাতে একটি লিখিত স্মারকলিপি দেন, যেখানে তারা দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অপসারণ, চাকরিচ্যুতদের পুনর্বহাল ও স্বাধীন তদন্ত কমিটি গঠনের দাবি জানান।

চাকরিচ্যুত এক শ্রমিক ইমরান বলেন, ‘আমরা যারা প্রকৃত প্রতিবন্ধী, চাকরিটাই ছিল আমাদের জীবনের ভরসা। অন্যায়ভাবে চাকরি হারিয়ে আমরা অনেকে ঋণগ্রস্ত ও অনাহারে দিন কাটাচ্ছি।’

উপদেষ্টা শারমিন এস মুরশিদ বিক্ষোভকারীদের বক্তব্য মনোযোগ দিয়ে শোনেন এবং বলেন, ‘আমি আপনাদের অভিযোগ গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করব।

বিষয়টি খতিয়ে দেখতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে নির্দেশ দেওয়া হবে। কেউ অন্যায় করলে ছাড় দেওয়া হবে না।’

তার এই আশ্বাসের পর বিক্ষোভকারীরা শান্ত হয়ে অবরোধ তুলে নেন। উপস্থিত কর্মকর্তাদের মতে, উপদেষ্টার মানবিক আচরণের ফলে উত্তেজনা প্রশমিত হয়।

প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্টের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, কিছু প্রক্রিয়াগত কারণে কিছু কর্মীর চাকরি স্থগিত হয়েছিল, তবে উপদেষ্টার নির্দেশে বিষয়টি পুনর্বিবেচনা ও তদন্তের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

ঘটনাটিকে প্রশাসনিক ও মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।

উপদেষ্টা শারমিন এস মুরশিদের সরাসরি মাঠপর্যায়ে উপস্থিত থেকে চাকরিচ্যুত প্রতিবন্ধী শ্রমিকদের অভিযোগ শোনা সমাজে একটি ইতিবাচক ও প্রশংসনীয় দৃষ্টান্ত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

এসআর

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর