বরিশালের হিজলা ও মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলার মাঝ দিয়ে প্রবাহিত প্রায় ৯০ কিলোমিটার মেঘনা নদীকে ‘ইলিশের খনি’ বলা হয়।
এই নদীতে মা ইলিশ রক্ষায় শুক্রবার রাত ১২টা থেকে শুরু হয়েছে ২২ দিনের কঠোর নিষেধাজ্ঞা। এ সময় নদীতে মাছ ধরা, বিক্রি ও মজুত সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকবে।
নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করতে কোস্টগার্ড, নৌ পুলিশ, র্যাব ও সেনাবাহিনীর পাশাপাশি এবার প্রথমবারের মতো ড্রোন ব্যবহার করছে প্রশাসন। হিজলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলম জানান, অন্তত চারটি ড্রোনের মাধ্যমে নদী পর্যবেক্ষণ করা হবে, যেখানেই জাল পড়বে সেখানেই স্পিডবোটে অভিযান চালানো হবে।
তবে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের দুশ্চিন্তা রয়ে গেছে। অতীতে মা ইলিশ রক্ষায় গিয়ে প্রশাসনের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। অন্যদিকে, দাদন প্রথা ও মহাজনদের চাপের কারণে জেলেদেরও ঝুঁকি নিয়ে নদীতে নামতে হয়। ফলে নিষেধাজ্ঞা চলাকালে প্রায়ই সংঘর্ষের পরিস্থিতি তৈরি হয়।
সরকারি হিসাবে বরিশালে ৭৯ হাজার জেলে রয়েছে। এর মধ্যে ৬৬ হাজার ৫২৪ পরিবারকে ২৫ কেজি করে চাল দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু জেলেদের অভিযোগ, এই বরাদ্দ সংসার চালাতে যথেষ্ট নয়।
মেহেন্দীগঞ্জের জেলে আলী হোসেন বলেন, ‘আমার ছয় সদস্যের সংসারে দৈনিক আড়াই কেজি চাল লাগে। সরকার থেকে যা পাই, তাতে সংসার চলে না। বাধ্য হয়ে অনেকেই নদীতে নামেন।’
মৎস্য গবেষকদের মতে, গত বছর প্রায় ৪০ হাজার টন ইলিশ উৎপাদন কমেছে, এ বছরও হ্রাসের আশঙ্কা রয়েছে।
ইলিশ গবেষক মীর মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘ড্রোনে নৌকা ধরা পড়বে, কিন্তু জেলেদের না খেয়ে থাকা ধরা পড়বে না। মা ইলিশ রক্ষা করতে হলে জেলেদের জীবিকার নিশ্চয়তাও দিতে হবে।’
বিশেষজ্ঞদের মতে, আইন প্রয়োগের পাশাপাশি জেলেদের জীবিকা সুরক্ষায় কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে অভিযান বা আধুনিক প্রযুক্তি দিয়েও কাঙ্ক্ষিত ফল পাওয়া যাবে না।
এসআর
মন্তব্য করুন: