গাজীপুরের টঙ্গী ধীরে ধীরে পরিণত হয়েছে অগ্নিঝুঁকির শহরে।
আবাসিক এলাকায় গড়ে ওঠা শত শত কেমিক্যাল গোডাউন, নিয়ন্ত্রণহীন পরিবেশ ও দায়সারা লাইসেন্স প্রক্রিয়ার কারণে এ শিল্পাঞ্চল আজ পরিণত হয়েছে মৃত্যুফাঁদে। এর সর্বশেষ প্রমাণ মিলল গত সোমবার সাহারা মার্কেটের এক কেমিক্যাল গোডাউনে আগুনের ঘটনায়।
আগুন নিয়ন্ত্রণে গিয়ে দগ্ধ চার ফায়ার সার্ভিস কর্মীর মধ্যে দুজন—শামীম আহমেদ ও নুরুল হুদা—জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় প্রাণ হারান। তারা দুজনই শতভাগ দগ্ধ ছিলেন। ফায়ার ফাইটারদের মৃত্যু কেবল একটি দুর্ঘটনা নয়, বরং অব্যবস্থাপনা ও অবহেলার নগ্ন প্রতিফলন।
সোমবারের অগ্নিকাণ্ডের পর সাহারা মার্কেটসহ টঙ্গীর বেশিরভাগ কেমিক্যাল গোডাউন ও কারখানায় তালা ঝুলছে। মালিকরা গা-ঢাকা দিয়েছেন, শ্রমিকরাও সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। তবে সরেজমিনে দেখা গেছে, আবাসিক এলাকার ভেতরে ও সরকারি-বেসরকারি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের পাশে অন্তত পাঁচ শতাধিক কেমিক্যাল গোডাউন রয়েছে। অনেক দোকানেই দাহ্য পদার্থ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রাখা, যা যে কোনো সময় ঘটাতে পারে ভয়াবহ দুর্ঘটনা।
ফায়ার সার্ভিস ও পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, কেমিক্যালের গন্ধ ১০০ মিটারের মধ্যে মানুষের জন্য প্রাণঘাতী হতে পারে। এতে শ্বাসকষ্ট, ত্বকের রোগ, চোখের সমস্যা এমনকি দীর্ঘমেয়াদে ক্যান্সারের ঝুঁকি থাকে। স্থানীয়রা বলছেন, প্রতিবন্ধী মানুষদের বসবাস করা এলাকায় কেমিক্যাল বাজার গড়ে তোলা এক ধরনের অমানবিকতা।
ফায়ার সার্ভিসের টঙ্গী স্টেশন অফিসার শাহিন আলম জানিয়েছেন, দুর্ঘটনাকবলিত ফেমাস কেমিক্যাল কারখানার ফায়ার লাইসেন্স ছিল না। আরও অনেক কারখানাই একই অবস্থায় চলছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আরেফিন বাদল জানান, ফেমাস কেমিক্যালের পরিবেশ লাইসেন্সও ছিল না। নিয়মিত অভিযানে জরিমানা করা হলেও দুর্ঘটনার পর মালিকরা পালিয়ে যায়, পরে আবার ব্যবসা শুরু করে—এমন দায় এড়ানোর সংস্কৃতিই বড় ঝুঁকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের টঙ্গী অঞ্চলের লাইসেন্স কর্মকর্তা মোহাম্মদ সুমন বলেন, লাইসেন্স দেওয়ার আগে জেলা প্রশাসক ও ফায়ার সার্ভিসের অনুমতি যাচাই করা হয়। তবে অনেক ব্যবসায়ী অনুমোদিত লাইসেন্সের বাইরে বিপজ্জনক কেমিক্যাল মজুত করেন, যা দুর্ঘটনার কারণ হয়।
এদিকে গাজীপুর মহানগর পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কমিশনার জাহিদুল হাসান জানান, ফেমাস কেমিক্যাল কারখানায় হতাহতের ঘটনায় এখনও মামলা হয়নি। তবে ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে নিহত ফায়ার ফাইটারদের বিষয়ে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
এসআর
মন্তব্য করুন: