[email protected] বুধবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫
২ আশ্বিন ১৪৩২

কোটিপতি তিন ঝাড়ুদারের অস্বাভাবিক সম্পদ, ঢাকায় ফ্ল্যাট–প্লট, সন্তান বিদেশে

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ৮:০০ পিএম

সংগৃহীত ছবি

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের তিন পরিচ্ছন্নতাকর্মীর জীবনযাত্রা নিয়ে শুরু হয়েছে ব্যাপক আলোচনা।

মাসে ১৭ হাজার টাকার চাকরি, অথচ তাদের সম্পদ ও প্রভাবশালী অবস্থান অনেক ব্যবসায়ী ও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাকেও হার মানায়। কেউ পাঁচতলা ভবনের মালিক, কেউ আবার চালাচ্ছেন ব্যবসা—আর সন্তানরা পড়াশোনা করছে কানাডার মতো উন্নত দেশে। গণমাধ্যমকর্মীদের অনুসন্ধানে তাদের এই অস্বাভাবিক সম্পদের তথ্য উঠে এসেছে।

এই তিনজন হলেন—আব্দুল লতিফ, আব্দুল জলিল ও এখলাছ। পরিচ্ছন্নতাকর্মী হলেও তারা দীর্ঘদিন ধরে ইউনিয়নের প্রভাবশালী নেতা হিসেবে পরিচিত। তাদের বিরুদ্ধে জমি দখল, চাঁদাবাজি থেকে শুরু করে জালিয়াতির মতো গুরুতর অভিযোগ রয়েছে।

লতিফ করপোরেশনের ঝাড়ুদার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করলেও বর্তমানে হাজারীবাগে ছয়তলা ভবনের একাধিক ফ্ল্যাটের মালিক। তার স্ত্রীও একটি ফ্ল্যাটের মালিকানা স্বীকার করেছেন। তিনি স্কেলিং ভেঞ্চারস অ্যান্ড ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক এবং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সদস্য।
অনুসন্ধান বলছে, ইউনিয়নের নেতৃত্বের সুযোগ কাজে লাগিয়ে গত ১৬ বছরে সদস্যদের কাছ থেকে প্রায় ৭০ কোটি টাকা চাঁদা তুলেছেন তিনি। কোয়ার্টার পাইয়ে দেওয়ার নামে একটি ভবনের বাসিন্দাদের কাছ থেকে হাতিয়েছেন আরও ৪৮ লাখ টাকা। ঢাকায় আরও দুটি ফ্ল্যাট, কুমিল্লার হোমনায় জমি, দোকান ও ফার্মেসি রয়েছে তার। ছেলেও পড়াশোনা করছে কানাডায়।

ইউনিয়নের সহসভাপতি জলিল মাসে বেতন পেতেন ৭০ হাজার টাকার সামান্য বেশি। কিন্তু এখন রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর রায়েরবাগে তিনতলা ভবনের মালিক তিনি। সহকর্মীরা দাবি করছেন, কামরাঙ্গীরচরেও তার একাধিক সম্পত্তি রয়েছে। যদিও তিনি অভিযোগ অস্বীকার করেন, অনুসন্ধান প্রমাণ করেছে তার সম্পদ বেতনের তুলনায় অস্বাভাবিকভাবে বেশি।

সাউথ সিটির পরিচ্ছন্নতাকর্মী এখলাছ কেরানীগঞ্জের খোলামোড়া এলাকায় পাঁচতলা ভবনের মালিক। পাশাপাশি নির্মাণাধীন একটি ভবনেও রয়েছে তার শেয়ার। অথচ এখনও তিনি সিটি করপোরেশনের কোয়ার্টারে অবৈধভাবে বসবাস করছেন।

সহকর্মীদের অভিযোগ, এরা নিজেরা মাঠে কাজ করেন না; অন্যদের দিয়ে দায়িত্ব করান। কেউ কেউ আবার দীর্ঘ ছুটিতে থেকেও প্রক্সি কর্মীর মাধ্যমে কাজ চালান, বেতনের অর্ধেক রেখে বাকিটা দিয়ে দেন প্রক্সিকে। এক শ্রমিক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন,

“চাকরি পায় তারা-ই, যাদের ট্যাগ আছে। সাধারণ মানুষের সুযোগ হয় না।”

অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে দীর্ঘদিন যুক্ত থাকলেও এখন বিএনপির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করছেন তারা। রাজনৈতিক প্রভাবকে হাতিয়ার করেই গড়ে তুলেছেন অর্থ ও ক্ষমতার সাম্রাজ্য।

এসআর

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর