[email protected] শুক্রবার, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫
২১ ভাদ্র ১৪৩২

চোখের আবছায়া নিয়ে অনার্স ফাইনাল পরীক্ষা দিলেন জুলাইর আহত সৌরভ

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ৪:০৯ পিএম

সংগৃহীত ছবি

দেশে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করে বিদেশে উচ্চশিক্ষা নেওয়ার স্বপ্ন ছিল কুমিল্লা সরকারি কলেজের ছাত্র সৌরভ চক্রবর্তীর।

কিন্তু জুলাই অভ্যুত্থানের সময় ছাত্রলীগের ককটেল হামলায় সেই স্বপ্নে নেমে আসে অন্ধকার। চোখে ছিটকে আসা স্প্লিন্টারের আঘাতে তার একটি চোখের দৃষ্টিশক্তি প্রায় হারিয়ে গেছে। দীর্ঘ সাত মাস চিকিৎসার পর তিনি চোখের আবছায়া নিয়ে অংশ নিয়েছেন অনার্স ফাইনাল পরীক্ষায়।

কুমিল্লার চিলোড়া গ্রামের সনাতন ধর্মাবলম্বী পরিবারে জন্ম সৌরভের। পিতা দিলীপ চক্রবর্তী পৈত্রিক পেশায় পুরোহিত। দুই ছেলেকে নিয়ে তার অনেক স্বপ্ন ছিল—বিশেষ করে ছোট ছেলে সৌরভের প্রতি। কিন্তু ২০২৪ সালের ৩ আগস্ট কুমিল্লা পুলিশ লাইন এলাকায় আওয়ামী লীগের স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে যোগ দিয়ে সহপাঠীদের সঙ্গে ককটেল বিস্ফোরণে মারাত্মকভাবে আহত হন তিনি। সহপাঠীরা রক্তাক্ত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করান।

সৌরভ সেই দিনের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা স্মরণ করে বলেন,
“আমরা খালি হাতে আন্দোলনে ছিলাম। হঠাৎ ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীরা অস্ত্র হাতে ঘিরে ধরে একের পর এক গুলি আর ককটেল ছুড়তে থাকে। প্রাণ বাঁচাতে ছুটতে গিয়েও রক্ষা পাইনি। আমার ডান চোখ, নাক ও বুকে স্প্লিন্টার বিদ্ধ হয়। প্রথমে চিকিৎসার তেমন সুযোগ পাইনি। পরে সহপাঠীদের সহযোগিতায় উন্নত চিকিৎসা পাই, কিন্তু চোখের আলো আর পুরোপুরি ফিরে আসেনি।”

তিনি জানান, সাত মাস চিকিৎসার কারণে পাঠ্যবই থেকে অনেকটা দূরে ছিলেন। তারপরও সাহস সঞ্চয় করে অনার্স ফাইনাল পরীক্ষা দিয়েছেন। “ডান চোখের আবছায়া নিয়ে পড়াশোনা করেছি, প্রস্তুতিও কম ছিল। কিন্তু পরীক্ষা দিয়েছি। স্বপ্ন ছিল মাস্টার্স শেষ করে বিদেশে উচ্চশিক্ষা নেবো, কিন্তু এখন মনে হয় সেই স্বপ্ন অধরাই থেকে যাবে।”

পিতা দিলীপ চক্রবর্তী আবেগাপ্লুত হয়ে বলেন,
“ছোটবেলা থেকেই সৌরভ পড়াশোনায় মনোযোগী ছিল। স্বপ্ন ছিল বিদেশে গিয়ে পড়াশোনা করবে, ভালো চাকরি করবে। কিন্তু চোখের অবস্থা দেখে মনে হয় আর সম্ভব না। তার চিকিৎসায় এখন পর্যন্ত অন্তত ৫ লাখ টাকা খরচ হয়েছে, সরকার থেকে পেয়েছি মাত্র ১ লাখ টাকা। চিকিৎসা এখনও চলছে।”

এই ঘটনাটি কেবল ব্যক্তিগত দুর্ভাগ্য নয়, বরং আমাদের সমাজের সহিংস রাজনীতির নির্মম চিত্র। যেখানে তরুণরা হাতে কলম ধরার কথা, সেখানে তারা হারাচ্ছে চোখের আলো ও ভবিষ্যতের স্বপ্ন।

প্রসঙ্গত, জুলাই অভ্যুত্থানের ঘটনায় সরকারি তালিকায় চান্দিনা উপজেলার ১ জন নিহত ও ১০ জন আহত হিসেবে উল্লেখ রয়েছে। এর মধ্যে গুরুতর আহতদের তালিকায় সৌরভও আছেন। নিহতের তালিকায় রয়েছেন রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে পুলিশের গুলিতে নিহত ইমাম হাসান তায়িম ভূইয়া।

এসআর

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর