চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার আমিরাবাদ একলাশপুর বাবুবাজারের মৎস্য আড়তে ইলিশ যেন এখন সোনার হরিণ।
নদীতে মাছের দেখা না মেলায় বাজারে সরবরাহ কম, আর যেটুকু আছে তার দাম সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে।
মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, ১ কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২,৩০০ থেকে ২,৪০০ টাকায়। মাঝারি আকারের (৬০০-৭০০ গ্রাম) ইলিশের দাম ১,২০০ থেকে ১,৩০০ টাকা প্রতি কেজি। অন্যদিকে বড় পাঙ্গাস মাছ (ওজন ৫ কেজির বেশি) বিক্রি হচ্ছে ১,০০০-১,১০০ টাকা কেজি দরে।
স্থানীয় ক্রেতা হোসেন আলী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন,
“প্রতি বছর এই সময়ে ইলিশ কিনে খেতাম। কিন্তু এখন এক কেজি ইলিশ কিনতে লাগে দুই হাজার টাকা! এই দামে এক মণ চাল কেনা যায়। আমাদের মতো সাধারণ মানুষের পক্ষে ইলিশ কেনা অসম্ভব হয়ে গেছে।”
জেলে টিটু বর্মণ বলেন,
“আগের মতো নদীতে এখন আর ইলিশ নেই। অনেক সময় সারারাত জাল ফেলেও একটা মাছ পাওয়া যায় না। নৌকা, তেল, বরফ সব খরচ নিজেই বহন করি, কিন্তু মাছ না থাকায় লোকসানে পড়ছি।”
আরেক জেলে আল আমিন বলেন,
“জীবন ঝুঁকি নিয়ে নদীতে নামি, কিন্তু জাল খালি উঠে। বর্ষার মৌসুমে যেখানে মাছ পাওয়ার কথা, সেখানে এখন জালেও নেই, পানিতেও নেই।”
আমিরাবাদ মৎস্য আড়তের আড়তদার দেলু বেপারী বলেন,
“এ সময়টা ইলিশের প্রজননকাল হওয়ায় মাছ কম ধরা পড়ে। ফলে বাজারে সরবরাহও কম, দাম তাই বাড়তি। আমরাও চাই সস্তায় বিক্রি করতে, কিন্তু বেশি দামে কিনে কম দামে বিক্রি সম্ভব নয়।”
আরেক আড়তদার সিরাজ মোল্লা বলেন,
“জেলেরা এখন তেমন মাছ পাচ্ছে না। তার ওপর পরিবহন খরচ বেড়েছে, ফলে দাম বাড়ছে। কিছুদিন কষ্ট করলে আগস্টে হয়তো দাম কমবে।”
বাবুবাজারের সরদার রাজিব খান জানান,
“আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এক-দুই সপ্তাহের মধ্যে নদীতে মাছ উঠবে এবং দামও কিছুটা সহনীয় হবে। তবে সরকারিভাবে উদ্যোগ নেওয়া হলে সাধারণ মানুষ কিছুটা স্বস্তি পাবে।”
স্থানীয় গৃহবধূ সাবিনা ইয়াসমিন বলেন,
“ইলিশ ছাড়া উৎসব অসম্পূর্ণ মনে হয়। কিন্তু যেভাবে দাম বাড়ছে, তাতে ইলিশ আমাদের মতো মধ্যবিত্তের জন্য বিলাসবস্তু হয়ে দাঁড়িয়েছে।”
ক্রেতা লিয়াকত হোসাইন রাফেদ বলেন,
“বাজারে এসেছিলাম ইলিশ কিনতে, কিন্তু দাম শুনে মাথা ঘুরে গেল। বাধ্য হয়ে রুই আর কাতলা কিনে চলে গেলাম।”
স্থানীয়রা বলছেন, বাজারে ইলিশের অস্বাভাবিক দাম নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের তৎপরতা প্রয়োজন। পাশাপাশি মাছের সরবরাহ বাড়াতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার ওপর জোর দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
এ বিষয়ে মতলব উত্তর উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা বিজয় কুমার দাস বলেন,
“নদীর পানির মান খারাপ হওয়া, অপরিকল্পিত নিষেধাজ্ঞা ও অবৈধ উপকরণ ব্যবহারের কারণে মাছের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। আমরা নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছি অবৈধ জাল ও চাঁই অপসারণে।”
তিনি আরও বলেন,
“এখন বর্ষার মৌসুম, এ সময়েই মাছ বেশি ধরা পড়ে। আশা করছি, আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই নদীতে মাছের প্রাচুর্য বাড়বে, এবং বাজারে দামও কমে আসবে।”
এসআর
মন্তব্য করুন: