পাইলট হয়ে আকাশে ওড়ার স্বপ্ন দেখত সায়ান ইউসুফ।
সেই স্বপ্ন আর কোনোদিন সত্যি হবে না। আগুনে ঝলসে যাওয়া সেই স্বপ্ন ছাই হয়ে মিলিয়ে গেল ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনায়। রাজধানীর উত্তরা আবাসিক এলাকার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের দিয়াবাড়ি ক্যাম্পাসে বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমানের ভূপাতিত ঘটনায় প্রাণ হারায় সপ্তম শ্রেণির ছাত্র সায়ান।
সোমবার (২১ জুলাই) দিবাগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে রাজধানীর জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে ১৪ বছরের সায়ান।
তার মৃত্যু শুধু একটি শিশুকে নয়, ছিন্নভিন্ন করেছে একটিমাত্র পরিবারের সব আলো। কফিনে মোড়া সন্তানের নিথর দেহ জড়িয়ে ধরে মায়ের বুকফাটা আহাজারিতে ভারি হয়ে ওঠে আকাশ। আর পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন বাবা এএফএম ইউসুফ—নিশ্চল, নিঃশব্দ, পাথরের মতো।
সায়ানের বাবা এএফএম ইউসুফ মাইলস্টোন কলেজের রসায়নের সহকারী অধ্যাপক, মা শামীমা শাম্মী একই প্রতিষ্ঠানের স্কুল শাখায় রসায়নের শিক্ষিকা।
তাঁদের চোখের সামনে আগুনে ঝলসে গিয়েছিল তাঁদের আদরের একমাত্র সন্তান।
সায়ানের মা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন,
“সকালে ওর জন্য ফেসবুকে দোয়ার পোস্ট দিয়েছিলাম। এত মায়ের দোয়া কাজে লাগলো না! আমার সোনার মানিক... পাইলট হতে চেয়েছিল... সত্যিই হয়তো এখন সে সবার ওপরে উড়ে গেছে। আমাদের ছেড়ে।”
বাবা ইউসুফ বলেন,
“আমি শিক্ষক। জীবনে অনেক ছাত্রকে মানুষ করেছি, অনেকের স্বপ্ন গড়েছি। অথচ নিজের সন্তানের স্বপ্ন ভস্ম হয়ে গেল চোখের সামনে। ভাবিনি এভাবে হারাতে হবে।”
মঙ্গলবার দুপুরে সায়ানের মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার বশিকপুর ইউনিয়নের গ্রামের বাড়িতে। বিকেল ৩টায় জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয় তাকে।
সহপাঠী, আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশী—সবার চোখে পানি। সবারই প্রশ্ন: এমন নিষ্পাপ শিশুর জীবনে এমন পরিণতি করে।
সায়ানের মতো একই দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে লক্ষ্মীপুরের আরেক শিক্ষার্থী আফনান ফায়াজ। সে সদর উপজেলার পার্বতীনগর ইউনিয়নের সোনাপুর গ্রামের বাসিন্দা। পরিবার সূত্রে জানা গেছে, আফনানকে মঙ্গলবার সকালে ঢাকায় দাফন করা হয়েছে।
সায়ান ও আফনান—দুজনের বয়সই মাত্র ১৪। সপ্তম শ্রেণিতে পড়ত। এমন বয়সে মৃত্যুর নামগন্ধও থাকে না চিন্তায়। অথচ রাজধানীর এক উজ্জ্বল ক্যাম্পাসেই তারা দুজন আগুনে পুড়ে ঝরে গেল জীবন নামের কচি ফুলের মতো।
দায়িত্ব, জবাবদিহিতা ও নিরাপত্তার ঘাটতি যদি প্রাণঘাতী দুর্ঘটনায় রূপ নেয়, তার খেসারত হয়তো এভাবেই দিতে হয়—স্বপ্নভঙ্গের শোকে ডুবে থাকা পরিবার আর নিঃসঙ্গ হয়ে পড়া ক্লাসরুম। এ ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্ত ও দায় নিরূপণ এখন সময়ের দাবি।
এসআর
মন্তব্য করুন: