[email protected] মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই ২০২৫
৩১ আষাঢ় ১৪৩২

“সবাই দেখেও কিছু করল না”—স্বামীর নির্মম হত্যার বিচার চান সোহাগের স্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১২ জুলাই ২০২৫ ৫:০৯ পিএম

সংগৃহীত ছবি

“সবাই চেয়ে চেয়ে দেখল, একটা মানুষকে কিভাবে মারা হচ্ছে! কেউ একটু এগিয়ে এলো না।

এভাবে কি কেউ কাউকে মেরে ফেলতে পারে? এখন সারাজীবন আমার চোখের জল ফেলেই কাটাতে হবে। সন্তানদের নিয়ে আমি কীভাবে বাঁচব?”—স্বামী হত্যার বর্ণনা দিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন লাকী বেগম।

শনিবার (১২ জুলাই) বরগুনায় নিহত ব্যবসায়ী মো. সোহাগ ওরফে লাল চাঁদের বাড়িতে গেলে এসব হৃদয়বিদারক কথা বলেন তার স্ত্রী লাকী বেগম। তিনি অভিযোগ করেন, স্বামীকে নৃশংসভাবে হত্যার পর মামলা দায়ের করতেও ভোগান্তির শিকার হতে হয়েছে তাদের। কোতোয়ালি থানায় এজাহার দিতে গেলে পুলিশ একাধিকবার ডেকে নিয়ে তা পরিবর্তন করে।

লাকী বেগম আরও বলেন, “ময়নাতদন্ত শেষ হয়ে যাওয়ার পরও অজানা কারণে অনেক দেরিতে আমাদের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়। আমার স্বামীকে যেভাবে বিবস্ত্র করে পাথর দিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে, তা কোনো মানুষ করতে পারে না। যারা এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।”

তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “আমার স্বামী আমাদের জন্য কিছুই রেখে যেতে পারেনি। এখন আমি আমার দুই সন্তানকে নিয়ে কোথায় যাব? কীভাবে তাদের ভবিষ্যৎ গড়ব? তারা আমার কী ক্ষতি করেছিল?”

 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নিহত সোহাগের দুই শিশু সন্তান বাবার কবরের পাশে কখনো দাঁড়িয়ে, কখনো বসে চুপচাপ সময় কাটাচ্ছে। বাবার হারানোর শোক তাদের মুখে কথা রুদ্ধ করে দিয়েছে।

 

নিহতের পরিবারের বরাতে জানা যায়, হত্যাকাণ্ডে অন্যতম আসামি মাহমুদুল হাসান মাহিন ছিলেন সোহাগের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। তাদের মধ্যে পারিবারিক সম্পর্কও ছিল, এমনকি সোহাগ মাহিনের পরিবারের খরচও বহন করতেন। অথচ সেই ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের সুযোগ নিয়েই মাহিন ও তার সহযোগীরা মাসে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। সোহাগ চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে পরিকল্পিতভাবে মুঠোফোনে ডেকে নিয়ে তাকে হত্যা করা হয়।

সোহাগের স্বজনদের অভিযোগ, তাকে দোকানে ডেকে নিয়ে প্রথমে মারধর করা হয়, পরে রাস্তার পাশে প্রকাশ্যে পাথর দিয়ে মাথায় আঘাত করে হত্যা করা হয়।

গত ৯ জুলাই রাজধানীর মিটফোর্ড এলাকায় প্রকাশ্যে এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়। হত্যার মর্মান্তিক ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তা মুহূর্তেই ভাইরাল হয়। ঘটনায় আলমগীর হোসেন, মনির হোসেন, মাহমুদুল হাসান মাহিন, তারেক রহমান রবিন ও মো. টিটন গাজীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

 

সোহাগ হত্যার প্রতিবাদ ও বিচারের দাবিতে বরগুনা সদর রোডে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়। এতে অংশ নেন বরগুনা প্রেস ক্লাব ও মফস্বল সাংবাদিক ফোরাম (বিএমএসএফ) বরগুনা জেলা শাখার সদস্যরা, ইসলামী আন্দোলন জেলা শাখার নেতৃবৃন্দ ও সাধারণ মানুষ। বক্তারা বলেন, এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের পেছনে যেই থাকুক, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

 

বরগুনা জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও ৭ নম্বর ঢলুয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মোল্লা কালবেলাকে বলেন, “এই ঘটনার রহস্য অবশ্যই পুলিশি তদন্তে বের হয়ে আসবে। যেই দোষী হোক, যে দলেরই হোক, আমরা এলাকাবাসী চাই তাদের ফাঁসি হোক। এমন বিচার হোক, যা ভবিষ্যতে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।”

এসআর

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর