[email protected] শনিবার, ১২ জুলাই ২০২৫
২৮ আষাঢ় ১৪৩২

ফেনীতে নতুন করে প্লাবিত হচ্ছে এলাকাগুলো, বন্ধ বিদ্যুৎ ও মোবাইল নেটওয়ার্ক

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১০ জুলাই ২০২৫ ৮:৩৪ এএম

সংগৃহীত ছবি

টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ফেনীর মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ২১টি স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে।

এতে ফুলগাজী, পরশুরাম ও ছাগলনাইয়া উপজেলার বহু নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে হাজারো মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন।

ফেনী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি জানিয়েছে, দুই উপজেলার কিছু এলাকায় বৈদ্যুতিক খুঁটি, মিটার ও ট্রান্সফরমার পানিতে ডুবে যাওয়ায় দুর্ঘটনা এড়াতে প্রায় ৩১ হাজার ২০০ গ্রাহকের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রাখা হয়েছে।

এছাড়া বিভিন্ন এলাকায় মোবাইল নেটওয়ার্ক বন্ধ থাকায় বানভাসি মানুষ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন।

 

সড়ক ডুবে যোগাযোগ বন্ধ, পানিবন্দি ২০ হাজার মানুষ

তীব্র স্রোতে ছাগলনাইয়ার বিভিন্ন গ্রামে পানি ঢুকছে। বহু গ্রাম প্লাবিত হওয়ায় একাধিক সড়ক ডুবে গেছে, ফলে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে ২০ হাজারের বেশি মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।

ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, পরশুরাম উপজেলায় ১২টি ও ফুলগাজীতে ৯টি ভাঙনস্থলে বাঁধ ভেঙে গেছে। এর মধ্যে মুহুরী নদীতে ১১টি, কহুয়া নদীতে ৬টি এবং সিলোনিয়া নদীতে ৪টি ভাঙনে ১০০টিরও বেশি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে নতুন নতুন এলাকা পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে।

আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় সাত হাজার মানুষ, এখনও সহায়তা মেলেনি অনেকের

জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, পরশুরাম, ফুলগাজী, ছাগলনাইয়া ও ফেনী সদর উপজেলায় মোট ৪৯টি আশ্রয়কেন্দ্রে ৬ হাজার ৮২৬ জন মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন।

পরশুরাম ও ফুলগাজী উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে ৯০ জন স্বেচ্ছাসেবক মাঠে কাজ করছেন।

তবে প্লাবিত এলাকার অনেক বাসিন্দা অভিযোগ করেছেন, ঘরবন্দি থাকলেও তাঁরা এখনো কোনো ধরনের খাদ্যসামগ্রী বা প্রশাসনিক সহায়তা পাননি।

ফুলগাজীর এক বাসিন্দা বলেন,

“নদীতে পানি কমলেও ভাঙন দিয়ে তীব্র স্রোত লোকালয়ে ঢুকছে। গলা সমান পানি পেরিয়ে অন্যত্র আশ্রয় নিতে হয়েছে। বিদ্যুৎ ও মোবাইল নেটওয়ার্ক না থাকায় আরও বেশি অসুবিধায় পড়েছি।”

টানা বৃষ্টি অব্যাহত, নদীর পানি বিপৎসীমার নিচে

ফেনী আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মজিবুর রহমান জানান, জেলায় টানা তিন দিন ধরে মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টি হচ্ছে। বুধবার (৯ জুলাই) রাত ১২টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৫৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। বৃহস্পতিবারও হালকা বৃষ্টি অব্যাহত থাকবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।

ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আক্তার হোসেন মজুমদার জানান,

“বুধবার রাত ১১টার দিকে নদীর পানি বিপৎসীমার ৩৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। তবে বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় পানি লোকালয়ে ঢুকে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।

 

”প্রশাসনের ত্রাণ কার্যক্রম ও বরাদ্দ

ছাগলনাইয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুবল চাকমা বলেন,

“দুর্গত মানুষের সহায়তায় আমরা সার্বক্ষণিক মাঠে আছি। উপজেলায় ৮টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে।”

জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম জানান,

“পরশুরাম, ফুলগাজী, ছাগলনাইয়া ও ফেনী সদর উপজেলায় প্রায় ২০ হাজার মানুষ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ইতোমধ্যে ৪৯টি আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় সাত হাজার মানুষ অবস্থান নিয়েছেন। জেলার ছয় উপজেলায় ত্রাণ তৎপরতা চালাতে সাড়ে ১৭ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।”

তিনি আরও জানান, জেলা প্রশাসনের কন্ট্রোল রুমের মাধ্যমে সার্বক্ষণিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।

এসআর

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর