[email protected] শনিবার, ১২ জুলাই ২০২৫
২৮ আষাঢ় ১৪৩২

রেকর্ড বৃষ্টিতে মুহুরী নদীর বাঁধ ভেঙে প্লাবিত ১৫ গ্রাম

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ৮ জুলাই ২০২৫ ৯:৩১ পিএম

সংগৃহীত ছবি

ফেনীতে টানা রেকর্ড বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলের ফলে মুহুরী, সিলোনিয়া ও কহুয়া নদীর বেড়িবাঁধে অন্তত ১০টি স্থানে ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে।

এতে জেলার পরশুরাম উপজেলার অন্তত ১৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

মঙ্গলবার (৮ জুলাই) বিকেল থেকে মুহুরী নদীর পানি বিপৎসীমার ওপরে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। পানির স্রোতে প্লাবিত হয়েছে ফসলি জমি, মাছের ঘের, সড়ক, ঘরবাড়ি—গোটা এলাকা পরিণত হয়েছে এক বিপর্যস্ত জনপদে। বেশিরভাগ এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।

জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভবনকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। প্রতি স্কুলে একজন করে নৈশপ্রহরীকে দায়িত্ব পালনের নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।

প্লাবিত প্রধান এলাকা:

  • মির্জানগর ইউনিয়ন: সিলোনিয়া নদীর মেলাঘর, গদানগর ও মনিপুর গ্রামে বাঁধ ভেঙে অন্তত ৬টি গ্রাম প্লাবিত।
  • চিথলিয়া ইউনিয়ন: মুহুরী নদীর ধনীকুন্ডা, জঙ্গলঘোনা, উত্তর শালধর ও অলকা গ্রামে বাঁধ ভেঙে প্লাবিত ৬টি গ্রাম।
  • বক্সমাহমুদ ইউনিয়ন: চারিগ্রাম এলাকায় নদীর বাঁধ ভেঙে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত।
  • ফুলগাজী সদর ইউনিয়ন: দেড়পাড়া এলাকায় মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর দুটি স্থানে ভাঙন।

স্থানীয় সাংবাদিক ও মনিপুর গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল মান্নান জানান, দুপুর থেকে সিলোনিয়া নদীর পানি বিপৎসীমার ওপরে প্রবাহিত হচ্ছে। নদীর পানি গড়িয়ে আশপাশের এলাকা, বিশেষ করে সুবার বাজারের দক্ষিণাংশ ডুবে গেছে।

বৃষ্টিপাত ও পানির উচ্চতা:
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যমতে, সোমবার দুপুর ১২টা থেকে মঙ্গলবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত ফেনীতে ৪০৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে। পাশাপাশি ভারতের ত্রিপুরা এবং ফেনী অঞ্চলে এখনো ভারি বর্ষণ অব্যাহত রয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের গ্রেজ রিডার নেপাল সাহা জানান, মঙ্গলবার বিকেল ৪টার পর থেকে মুহুরী নদীর পানি বিপৎসীমার ৯৬ সেন্টিমিটার ওপরে, অর্থাৎ ১২.৯৬ মিটার উচ্চতায় প্রবাহিত হচ্ছে। এর আগে বিকেল ৩টায় রেকর্ড করা হয় ১২.২৬ মিটার।

প্রশাসনের পদক্ষেপ:
জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম বলেন, মুহুরী ও সিলোনিয়া নদীর পানি বিপৎসীমার ওপরে প্রবাহিত হওয়ায় সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে। দুর্যোগকবলিত এলাকায় ক্ষতিগ্রস্তদের সর্বাত্মক সহযোগিতার জন্য জেলা প্রশাসনের একটি বিশেষ টিম সার্বক্ষণিক মাঠে কাজ করছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আক্তার হোসেনও নদীর পরিস্থিতিকে ‘অতি ঝুঁকিপূর্ণ’ উল্লেখ করে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন।

উল্লেখ্য, নদ-নদীর পানি আরও বাড়তে থাকলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এসআর

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর