বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে টানা বৃষ্টি ও উত্তাল সাগরের কারণে কক্সবাজারে পর্যটকদের আগমন থমকে গেছে।
বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকতের প্রাণচাঞ্চল্য যেন হঠাৎই থমকে গেছে। টানা চার দিন ধরে মেঘলা আকাশ, কখনো মাঝারি আবার কখনো ভারী বর্ষণ, সঙ্গে বিশাল ঢেউ—এসব মিলিয়ে সমুদ্রসৈকত ও পর্যটনকেন্দ্রগুলো একরকম নিস্তব্ধ হয়ে পড়েছে।
সৈকতে নামা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠায় এবং অব্যাহত বৃষ্টিতে ঘরবন্দি থাকতে বাধ্য হচ্ছেন পর্যটকরা। ফলে অনেকেই নির্ধারিত সময়ের আগেই হোটেল বুকিং বাতিল করে ফিরে যাচ্ছেন, যার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে পর্যটনখাত সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়।
তিন দিনের ছুটিকে ঘিরে কক্সবাজারের পাঁচ শতাধিক হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট ও গেস্টহাউসের প্রায় ৯০ শতাংশ কক্ষ আগাম বুকিং করা ছিল। তবে বৈরী আবহাওয়ার কারণে অধিকাংশ পর্যটক বুকিং বাতিল করে ফিরতি যাত্রা করছেন।
কক্সবাজার হোটেল-রিসোর্ট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুকিম খান বলেন,
"দুপুরের মধ্যেই বড় অংশের পর্যটক শহর ছেড়ে গেছেন। হোটেলগুলোতে এখন অধিকাংশ কক্ষ খালি পড়ে আছে।"
আবহাওয়া অধিদপ্তর কক্সবাজারসহ দেশের চারটি সমুদ্রবন্দরে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত জারি রেখেছে। পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ৯ জুলাই পর্যন্ত কক্সবাজার অঞ্চলে ভারি থেকে অতি ভারি বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে। ফলে পার্বত্য এলাকায় পাহাড়ধসের আশঙ্কাও রয়েছে।
কক্সবাজার আবহাওয়া কার্যালয়ের সহকারী আবহাওয়াবিদ আবদুল হান্নান জানান,
“সোমবার দুপুর ৩টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ১৫৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।”
টানা বৃষ্টিতে কক্সবাজার শহরসহ জেলার ৯ উপজেলার বিভিন্ন নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। সড়কগুলোতে পানি ওঠায় যান চলাচলে ব্যাঘাত ঘটছে। উখিয়ার রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতেও দেখা দিয়েছে চরম জলাবদ্ধতা।
উখিয়ার ইউএনও মোহাম্মদ কামরুল হোসেন চৌধুরী জানান,
“নিম্নাঞ্চল ও পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত রোহিঙ্গা শিবিরগুলো প্লাবিত হয়েছে।”
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা এ টি এম কাউছার আহমদ বলেন,
“ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার তালিকা তৈরিতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান জানান,
“অনেকের শেড পানির নিচে তলিয়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট সংস্থা ও ক্যাম্প ইনচার্জদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”
সি-সেফ লাইফগার্ডের সুপারভাইজার সাইফুল্লাহ সিফাত জানান, সাগরের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে লাল নিশানা টাঙিয়ে সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
তবে অনেক পর্যটক এ সতর্কতা অমান্য করে সমুদ্রে নামছেন, যা দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন বলেন,
“পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সৈকতের ঝুঁকিপূর্ণ অংশে লাল নিশানা টাঙানো হয়েছে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।”
এসআর
মন্তব্য করুন: