তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে লালমনিরহাটে ‘জাগো বাহে, তিস্তা বাঁচাই’ স্লোগানে বিশাল পদযাত্রা শেষে হাঁটু পানিতে নেমে প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেছেন অংশগ্রহণকারীরা।
সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী ও বিএনপির রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ আসাদুল হাবীব দুলুর নেতৃত্বে রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার তিস্তা রেলসেতু মঞ্চ থেকে পদযাত্রা শুরু হয়। হাজারো মানুষের অংশগ্রহণে বিশাল এই পদযাত্রাটি কাউনিয়া বাসস্ট্যান্ড হয়ে পুনরায় রেলসেতু মঞ্চে ফিরে শেষ হয়। পরে, বিশ্ববাসীকে তিস্তা নদীর পানির সংকট ও গভীরতা দেখাতে আন্দোলনকারীরা নদীর হাঁটু পানিতে নেমে প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন।
তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে আয়োজিত এই কর্মসূচি টানা ৪৮ ঘণ্টা ধরে চলেছে। দূর-দূরান্ত থেকে হাজারো মানুষ নদীপাড়ে সমবেত হন। কর্মসূচির মধ্যে ছিল আলোচনা সভা, নাটক, লোকজ গানের পরিবেশনা এবং বালু চরে রাত্রিযাপন।
অংশগ্রহণকারীরা নিজেদের উদ্যোগে চাল-ডাল সংগ্রহ করে রান্নার ব্যবস্থা করেন। তিস্তার বাংলাদেশ অংশে ১২৫ কিলোমিটার দীর্ঘ স্থানের ১১টি পয়েন্টে আয়োজিত এই কর্মসূচিতে ৪০ থেকে ৫০ হাজার মানুষ অংশগ্রহণ করে রাত্রিযাপন করেছে।
এই মহাসমাবেশ সফল করতে সভা মঞ্চ, প্যান্ডেল, সমাবেশ ও বিনোদনের জন্য পৃথক মঞ্চ তৈরি করা হয়। এছাড়া, পর্যাপ্ত লাইটিং, পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা এবং বিশুদ্ধ পানির জন্য নলকূপ স্থাপন করা হয়।
তিস্তা নদী পাড়ের বাসিন্দারা জানান, নদী ভাঙনের ফলে তাদের আবাদি কৃষিজমি বিলীন হয়ে গেছে। প্রতি বছর তাদের বাড়িঘর সরাতে বাধ্য হতে হয়। তারা বিশ্বাস করেন, তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে কৃষিজমি রক্ষা পাবে এবং ফসলের উৎপাদন বাড়বে।
তারা অভিযোগ করেন, বিগত সরকারগুলো বারবার তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিলেও তা বাস্তবে রূপ নেয়নি। এবার তারা বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দ্রুত এই মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের জোর দাবি জানিয়েছেন।
তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী, অধ্যক্ষ আসাদুল হাবীব দুলু বলেন,
“তিস্তা চুক্তি ও মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন কোনো ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা রাজনৈতিক দলের দাবি নয়। এটি রংপুরবাসীর জীবন-মরণের লড়াই।”
তিনি আরও বলেন, “শীত উপেক্ষা করে তিস্তার চরে হাজারো মানুষ রাত্রিযাপন করেছে। তাদের একটাই চাওয়া— তিস্তা মহাপরিকল্পনার দ্রুত বাস্তবায়ন। আমরা চাই, তিস্তার ভয়াবহ ভাঙনের কবল থেকে এই অঞ্চলের মানুষ চিরতরে মুক্তি পাক।”
এসআর
মন্তব্য করুন: