[email protected] শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫
৬ বৈশাখ ১৪৩২

পদ্মার চরে পরিযায়ী পাখি হত্যার মহোৎসব, প্রশাসন নির্বিকার

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ৯ জানুয়ারি ২০২৫ ৭:২১ পিএম

ফাইল ছবি

রাজশাহীর পদ্মার চরে পরিযায়ী পাখি হত্যার মহোৎসব চলছে।

কিছু চর এলাকায় বিষ টোপ দিয়ে পাখি হত্যার ঘটনা বেড়েছে এবং প্রশাসন এখনো কোনো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) সকালেও চরে শতাধিক মরা পাখি পড়ে থাকতে দেখা গেছে।

শীতকালীন পরিযায়ী পাখিরা শীতপ্রধান দেশ থেকে বাংলাদেশে এসে, নদী, খালবিল ও হাওর-বাঁওড়ে বিচরণ করে খাবার সংগ্রহ করে বেঁচে থাকে। তবে রাজশাহীর পদ্মার চরে এসে পাখিরা এক ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার হচ্ছে, যেখানে তারা মানবিক নিষ্ঠুরতার কারণে প্রাণ হারাচ্ছে।

অতিথি পাখি পর্যবেক্ষকরা জানিয়েছেন, পাখি শিকারের কারণে গত ১৪ বছরে রাজশাহীর পদ্মায় পাখির সংখ্যা প্রায় ১০ ভাগ কমে গেছে। তবে বন বিভাগ দাবি করছে, তারা পাখি শিকারিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে।

জানা গেছে, রাজশাহী নগরীর তালাইমারি পদ্মার চর থেকে টি-বাঁধ এলাকা পর্যন্ত অন্তত ৮টি গ্রুপ পাখি শিকার করে। তারা রাতের আঁধারে বিষ মেশানো মাছ দিয়ে পাখিদের খাদ্য দেয়, যা খেয়ে পাখিরা অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং পরে শিকারিরা সেগুলো ধরে জবাই করে বিক্রি করে। রাজশাহীর বাজারে এসব পাখি আড়াই থেকে তিন হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

সর্বশেষ বৃহস্পতিবার সকালে, রাজশাহীর টি-বাঁধের ওপারে চরে মৃত পাখি পড়ে থাকতে দেখা যায়। স্থানীয়রা অন্তত ১০টি চখাচখি পাখি উদ্ধার করে, তবে পাখি শিকারিরা ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়।

এ বিষয়ে রাজশাহীর বাসিন্দা নিয়ামত আলী জানান, "ভোর রাতে কিছু মানুষ চরে গিয়ে বিষ দেওয়া মাছ রেখে আসে, এরপর সকালে পাখিরা খাবার খেয়ে মরে পড়ে থাকে। পরে শিকারিরা সেগুলো তুলে নিয়ে বাজারে বিক্রি করে। প্রতিদিন ৫০ থেকে ৬০টি পাখি মেরে নিয়ে যায়।"

পাখিপ্রেমী ও গবেষকরা সতর্ক করছেন, পাখি নিধনের কারণে রাজশাহীতে পাখির সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে। আগে যেখানে নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত পদ্মায় নানা ধরনের পাখির আনাগোনা থাকতো, বর্তমানে তা কমে গিয়ে ১০ ভাগেরও কমে গিয়েছে। ২০১০ সালের পর থেকে প্রতি বছর পাখি আসা আরও কমে যাচ্ছে। পাখি নিধন বন্ধ না হলে ভবিষ্যতে এ সমস্যা আরও তীব্র হতে পারে।

পাখি পর্যবেক্ষক ও ফ্রিল্যান্স আলোচিত্রী হাসনাত রনি বলেন, "রাজশাহীর পদ্মার চরগুলোতে বিষ টোপ দিয়ে পাখি মারার ঘটনা বেড়েছে। কয়েকদিন আগে স্থানীয় কিছু পাখিপ্রেমী মৃত পাখি ও শিকারিদের পুলিশে সোপর্দ করেছিল, তবে পুলিশ কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তাদের ছেড়ে দেয়। এই নির্মমতা বন্ধ করা উচিত।"

রাজশাহী বিভাগীয় বন্যপ্রাণি পরিদর্শক মো. জাহাঙ্গীর কবির জানান, "পদ্মার চরে পাখি শিকারিরা পাখি শিকার করছে, আমরা বিষয়টি জানি এবং তাদের ধরতে অভিযান চালাচ্ছি।"

এ ধরনের অনৈতিক কার্যকলাপ বন্ধ করার জন্য আরো কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন পাখিপ্রেমীরা।

 

এসআর

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর