অতিথি পাখিদের আগমনে মেহেরপুরের খাল-বিল এখন মুখরিত।
বিশেষভাবে এখানে তেরঘরিয়া বিল, ছুচোখোলার বিল এবং মেহেরপুরের সবচেয়ে বড় গাংনীর ধলার বিলে পাখিদের আনাগোনা অনেক বেশি। পাখির কলতানে সারাক্ষণ পরিবেশ মুখরিত থাকছে। এসব বিল একসময় শীতকালজুড়ে পরিযায়ী পাখিতে ভরে থাকত, এবং মনে হতো এগুলো তাদের স্থায়ী আবাসস্থল। একসময় যেমন লোকজন দূর-দূরান্ত থেকে পাখি দেখতে আসত, এখনো তেমনি আসছেন পাখিপ্রেমীরা।
তবে, পরিস্থিতি এখন কিছুটা সংকটজনক হয়ে উঠেছে। শনিবার তেরঘরিয়া বিলপাড়ে গিয়ে দেখা যায়, বেশ কিছু পাখি শিকারি পাখি শিকার করতে ব্যস্ত। শিকারের দৃশ্য ক্যামেরাবন্দী করার চেষ্টা করলে তারা হুমকি দেয় এবং ছবি তোলার চেষ্টা করতে নিষেধ করে। একপর্যায়ে পাখি দেখতে আসা লোকজন সাংবাদিকদের পাশে দাঁড়ালে শিকারিরা সটকে পড়েন। যদিও পরিযায়ী পাখি হত্যা করার দায়ে শিকারিদের সর্বোচ্চ এক বছরের কারাদণ্ড বা এক লাখ টাকা অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে, মেহেরপুরের খাল-বিলে এ বিষয়ে কার্যকর নজরদারি যেন নেই।
শিকারি কার্যক্রমের পাশাপাশি, বিলের শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ঝাঁকবেঁধে উড়তে থাকা অতিথি পাখিদের দৃশ্যও চোখে পড়ে। পিয়াং হাঁস, পাতি সরালি, লেঙজা হাঁস, বালিহাঁস, পাতিকূট এবং দেশি শামুকখোল, পানকৌড়ির মতো পাখিরা বিল এলাকা মুখরিত করে তুলছে। তবে, এবছর পাখির সংখ্যা গত বছরের তুলনায় প্রায় অর্ধেক কম। যদিও সাইবেরিয়ান অতিথি পাখি এবং মানিকচকসহ অন্যান্য পাখির দল এখনও চোখে পড়ছে। সন্ধ্যা নেমে আসার পর পাখির দল উড়ে আসার দৃশ্য প্রকৃতিতে নতুন প্রাণ সঞ্চারিত করে।
স্থানীয় সাংবাদিক মোর্তুজা ফারুক জানান, নভেম্বর এলেই অতিথি পাখিরা এই বিলে চলে আসে। খান মোহাম্মদ আল রাফি জানান, দীর্ঘ বছর ধরে এই বিল পাখিদের জন্য অভয়ারণ্য হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। অতিথি পাখিদের সঙ্গে এই বিলের সম্পর্ক গভীর এবং প্রাচীন।
পাখিপ্রেমী সদানন্দ মন্ডল বলেন, আমাদের অসচেতনতার কারণে সামান্য স্বার্থের বা শখের জন্য শীতের পরিযায়ী পাখিদের শিকার করা হচ্ছে, যা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষার জন্য পাখিদের বিচরণস্থল রক্ষা করা জরুরি। আমাদের দেশে ক্রমেই অতিথি পাখির জন্য পরিবেশ বিপজ্জনক হয়ে উঠছে। শুধু আইন দিয়ে পাখি শিকার বন্ধ করা সম্ভব নয়; এ ব্যাপারে সকলের সচেতনতা প্রয়োজন।
এসআর
মন্তব্য করুন: