৮০ শতাংশ বিবাহিত পুরুষই নির্যাতনের শিকার : গবেষণা

বাংলাদেশ ম্যানস রাইটস ফাউন্ডেশন (বিএমআরএফ) দাবি করেছে, সমাজের প্রায় ৮০ শতাংশ বিবাহিত পুরুষ মানসিক বা শারীরিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন।

বাংলাদেশ ম্যানস রাইটস ফাউন্ডেশন (বিএমআরএফ) দাবি করেছে, সমাজের প্রায় ৮০ শতাংশ বিবাহিত পুরুষ মানসিক বা শারীরিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। সংস্থাটির পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ৯ বছরে সারা দেশে ৪,২৬৮ জন এবং নারায়ণগঞ্জ জেলায় ২,৩২৮ জন পুরুষ নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। তবে প্রকৃত সংখ্যা আরও অনেক বেশি বলে দাবি করা হচ্ছে।

মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবস উপলক্ষে বিএমআরএফ-এর চেয়ারম্যান শেখ খায়রুল আলম সোহেল এ তথ্য জানান।

তিনি জানান, চলতি বছরের অক্টোবর মাস পর্যন্ত সারা দেশে ১,০৬৭ জন পুরুষ নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। ২০২৩ সালে ১,০৪৯ জন, ২০২২ সালে ৭৯২ জন, ২০২১ সালে ৪৫০ জন, ২০২০ সালে ৩৩০ জন, ২০১৯ সালে ২৪০ জন, ২০১৮ সালে ১৭০ জন, ২০১৭ সালে ১২০ জন এবং ২০১৬ সালে ৫০ জন পুরুষ নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। একইভাবে, নারায়ণগঞ্জ জেলায় ২০২৩ সালের অক্টোবর পর্যন্ত ৬৪৭ জন পুরুষ নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।

শেখ খায়রুল আলম সোহেল আরও বলেন, "বিবাহিত পুরুষরা সবচেয়ে বেশি নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন, আর প্রায় ৮০ শতাংশ বিবাহিত পুরুষ মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়। তবে বাস্তবে নির্যাতনের শিকার পুরুষের সংখ্যা আরও অনেক বেশি, কিন্তু লোকলজ্জা ও সামাজিক অপমানে ভয়ে অনেকেই এই বিষয়টি প্রকাশ্যে আনতে সাহস পান না।"

তিনি আইনের অপব্যবহার এবং পুরুষ নির্যাতনের বিরুদ্ধে আরও কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। "নারী নির্যাতন আইন থাকলেও পুরুষ নির্যাতন আইন নেই, যা অনেক পুরুষকে মিথ্যা মামলার শিকার এবং মানসিক বা শারীরিক অত্যাচারের দিকে ঠেলে দেয়," বলেন সোহেল।

এছাড়া, বিএমআরএফ চেয়ারম্যান অভিযোগ করেন যে, অনেক নারী পুরুষদের বিরুদ্ধে মিথ্যা নারী নির্যাতন মামলা দিয়ে তাদের হয়রানি করছে। "পুরুষেরা নিজেদের প্রতি অবিচারের কথা বলতে ভয় পায়, অথচ নারীরা একাধিক আইন দিয়ে সুবিধা নিয়ে থাকে," তিনি বলেন।

একটি বিশেষ উদাহরণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, ২০১৫ সালে তার নিজস্ব জীবনের অভিজ্ঞতা, যেখানে স্ত্রী তার বিরুদ্ধে মিথ্যা যৌতুক মামলা করে এবং পরে নারী নির্যাতন মামলা ঠুকে দেয়। এই বিষয়টি তিনি মেনে চলে মামলাটি সমাধান করেছেন, কিন্তু একই সময়ে আরও অনেক পুরুষের এমন ঘটনা ঘটছে বলে তিনি জানান।

এদিকে, নারায়ণগঞ্জ জেলার মহিলা পরিষদের সদস্য অ্যাডভোকেট হাসিনা পারভীন বলেন, "সত্যি কথা বলতে, আমাদের সমাজে নারীরা পুরুষের তুলনায় বেশি নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। তবে কিছু অসাধু নারী আইনটির অপব্যবহার করছেন, যা অবশ্যই কমানো উচিত।" তিনি বলেন, "আইন সবার জন্য সমান হওয়া উচিত, যাতে প্রকৃত অপরাধী শাস্তি পায়, পুরুষ ও নারী উভয়েরই অধিকার রক্ষা হয়।"

এ বিষয়ে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, "যৌতুক বা পারিবারিক কারণে অনেক মিথ্যা মামলা করা হচ্ছে, যা আইন ব্যবস্থাকে দুর্বল করে দিচ্ছে। তবে আইন সবার জন্য সমান এবং নারীর নিরাপত্তা দেওয়া প্রয়োজন, যেমন পুরুষেরও অধিকার রয়েছে।"

এভাবে পুরুষদের প্রতি সহিংসতা ও নির্যাতন প্রতিরোধে আরও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ ম্যানস রাইটস ফাউন্ডেশন।