[email protected] শুক্রবার, ১০ জানুয়ারি ২০২৫
২৭ পৌষ ১৪৩১

কাগজে কলমে প্রকল্প দেখিয়ে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন শম্ভু

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৩ নভেম্বর ২০২৪ ৪:২৬ পিএম
আপডেট: ১৩ নভেম্বর ২০২৪ ৪:৫৩ পিএম

ফাইল ছবি

বরগুনা-১ আসনের পাঁচবার নির্বাচিত সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু তার রাজনৈতিক জীবনে অপরাজনীতির সংস্কৃতি গড়ে তুলেছেন।

  1. ক্ষমতার অপব্যবহার করে দলের ত্যাগী নেতাকর্মীদের অবজ্ঞা করেছেন এবং হাইব্রিড আওয়ামী লীগ নেতাদের দিয়ে দল পরিচালনা করেছেন। একে একে গড়ে তুলেছেন বিশাল অপরাধী সিন্ডিকেট।

সম্প্রতি শম্ভুর গ্রেফতার হওয়ার খবর বরগুনা-আমতলী-তালতলীর নির্বাচনি এলাকায় এক ধরনের আনন্দের ঢেউ তোলে। তার গ্রেফতারকে অনেকেই বরগুনায় অপরাজনীতির অবসান হিসেবে দেখছেন। শম্ভুর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি দীর্ঘদিন ধরে দলীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ জনগণকে শোষণ করে আসছেন।

জানা গেছে, ২০০৯ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর শম্ভু আর পেছনে ফিরে তাকাননি। তিনি আমতলী উপজেলায় বিএনপির সাবেক নেতা মতিয়ার রহমান খলিফা এবং তার ভাই মজিবুর রহমানকে দলে এনে এক নতুন অপরাজনীতি সৃষ্টি করেন। এদের মাধ্যমে তিনি দলের ত্যাগী নেতাকর্মীদের শোষণ এবং মিথ্যা মামলায় হয়রানি করেছেন, অভিযোগ করেছেন তৃণমূল নেতাকর্মীরা। শম্ভু ত্যাগী নেতাকর্মীদের দলের মধ্যে স্থান না দিয়ে কাগজে কলমে প্রকল্প দেখিয়ে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন এবং নিজের সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন।

তালতলী উপজেলায় রেজবি-উল কবির জোমাদ্দার, জাকির হোসেন চুন্নু মাস্টারসহ আরও বেশ কয়েকজন নেতার সহযোগিতায় তিনি কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। পাঁচবার সংসদ সদস্য থাকার সময় তিনি অসংখ্য প্রকল্পে অবৈধভাবে টাকা আত্মসাৎ করে ঢাকাসহ ভারত, আমেরিকা এবং সিঙ্গাপুরে বিলাসবহুল অট্টালিকা গড়ে তুলেছেন, এমন দাবি করেছে তার দলের নেতাকর্মীরা।

দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে শম্ভু বরগুনা-আমতলী-তালতলীর মানুষকে নির্যাতন করেছেন। তার শাসনামলে দলীয় কোন্দল সৃষ্টি করে নেতাকর্মীদের বিভক্ত রেখেছেন এবং জনগণকে শোষণ করেছেন। তৃণমূল কর্মী আফজাল হোসেন বলেন, “শম্ভু ও তার সাঙ্গপাঙ্গদের দুঃশাসনে আমরা অতিষ্ঠ ছিলাম। তারা দলে দলে বিভাজন সৃষ্টি করেছিল, আর সাধারণ মানুষকে শোষণ করেছিল।”

এছাড়া, আমতলীতে তার সহযোদ্ধা সাবেক পৌর মেয়র মতিয়ার রহমান, সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান, চাওড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আখতারুজ্জামান বাদল খানসহ একদল নেতার সহযোগিতায় সেখানে অপরাধের রাজত্ব গড়ে তোলা হয়। তাদের অনুগ্রহ ছাড়া আমতলীর কোনো কাজও সম্পন্ন হতো না। জমি দখল, নিয়োগ বাণিজ্য, টেন্ডার বাণিজ্য, মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি, এবং কিশোর গ্যাং লালন-পালনসহ সব ধরনের অপরাধ তাদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। এই অপরাধের টাকার সিংহভাগ সংসদ সদস্য শম্ভুর কাছে পৌঁছাত।

৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর শম্ভু ভারতে পালিয়ে গিয়েছিলেন। তবে সোমবার রাতে ঢাকার উত্তরা থেকে ডিবি পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। শম্ভুর গ্রেফতারের খবর পেয়ে বরগুনা-আমতলী-তালতলীর সাধারণ মানুষ ও দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে আনন্দের বন্যা বইছে।

এই ঘটনা আবারও প্রমাণ করেছে যে, অপরাজনীতির বিরুদ্ধে শুদ্ধি অভিযানে সরকার দৃঢ় অবস্থান নিয়েছে এবং অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে।

 

এসআর

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর